হাতীবান্ধায় কমলা

একটা সময় ছিল যখন ধারণা করা হতো, এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া কমলা উৎপাদনের জন্য অনুকূল নয়। কিন্তু ধৈর্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এ ধারণা পাল্টে দিয়েছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবি গ্রামের শিক্ষক দম্পতি। তাঁরা তাঁদের জমিতে কমলা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।
কমলা চাষে সফল হওয়া ওই দম্পতি হচ্ছেন খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার। হাতীবান্ধা উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তরে পশ্চিম সারডুবি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। তাঁরা তাঁদের বাড়ির সঙ্গেই ৮০ শতাংশ জমিতে কমলার বাগান করেছেন।
খলিলুর রহমান উপজেলার মিলনবাজার এলাকার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এ দম্পতি শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রম দিয়ে কমলা চাষে সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন।
কমলা চাষ শুরু করলেন কীভাবে, জানতে চাইলে ফাতেমা খাতুন বলেন, ২০০২ সালে বড় ভাই তাঁর বাড়িতে ভুটান থেকে আমদানি করা কয়েকটি কমলা নিয়ে এসেছিলেন। ওই কমলা বেশ মিষ্টি ছিল। তাই তা খেয়ে তাঁরা তৃপ্তি পেয়েছিলেন। বাজার থেকে কিনে আনা কমলা খেয়ে সেই তৃপ্তি পাওয়া যায় না। এ অতৃপ্তি থেকেই তাঁরা ভালো জাতের কমলা চাষের পরিকল্পনা করেন। তাই ভাইয়ের আনা কমলার বিচিগুলো তিনি ফেলে না দিয়ে বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রাখেন। কিছুদিনের মধ্যেই ওই বিচি থেকে চারা গজায়। এরপর পরিচর্যা শুরু করা হয়। চার বছরের মাথায় ফলন আসে। এ কমলা আকার, রং ও স্বাদে তাঁর ভাইয়ের আনা কমলার মতোই। তিনি ও তাঁর স্বামী ২০০৯ সাল থেকে কমলার চাষ শুরু করেন।
খলিলুর রহমান জানান, তাঁদের বাগানে ১৫২টি কমলাগাছ আছে। এবারই প্রথম ফলন এসেছে। এক হাজার কমলা হয়েছে। বিক্রি না করে এগুলো এলাকাবাসীর মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কমলা খেয়ে সবাই খুশি। গাছের গোড়ায় কচুরিপানা ও গোবর থেকে তৈরি জৈব সার দেওয়া হচ্ছে।
খলিলুর রহমান বলেন, ‘নার্সারি থেকে এ বছর প্রায় ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি চারা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর দুই থেকে তিন লাখ টাকার চারা বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বুলু মিয়া জানান, বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। একজন সফল চাষি হিসেবে খলিলুর দম্পতি হাতীবান্ধা উপজেলা চত্বরে আয়োজিত ‘২০১৪ কৃষি মেলায়’ পুরস্কৃত হয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই কমলা বাগানটি দেখেছি। কমলাগুলো রসাল ও সুস্বাদু। কমলা চাষের জন্য কারিগরি সহযোগিতা করছি। এলাকায় আরও কমলা বাগান করার জন্য কৃষককে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’