জামালপুরে সীমান্তবর্তী দুই গ্রামে বন্য হাতির তাণ্ডব

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দুটি গ্রামে বন্য হাতির পাল তাণ্ডব চালিয়ে ২০টি বসতঘর ও সেচযন্ত্রের পাঁচটি ঘর তছনছ করেছে। এ ছাড়া কয়েক একর জমির বীজতলা, সরিষা, গম ও আখখেত নষ্ট করেছে বন্য হাতির পাল। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালুঘাট পাহাড় থেকে আসা একপাল হাতি উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের মাখনেরচর ও পাথরেরচর গ্রামে এই তাণ্ডব চালায়। এ সময় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রায় অর্ধশত হাতি মাখনেরচর ও পাথরেরচর গ্রামে ঢুকে ২০টি বসতবাড়ি, কয়েক একর জমির বোরো ধানের বীজতলা, সরিষাখেত, গম ও আখখেতসহ বিভিন্ন খেত নষ্ট করে। আতঙ্কে প্রায় চার হাজার গ্রামবাসী নির্ঘুম রাত কাটায়। তাঁদের হইহুল্লোড়, মশালের আলো ও ঢাকঢোল পেটানোর শব্দে হাতির পাল গতকাল শনিবার বেলা একটার দিকে বালুঘাট পাহাড়ে ফিরে যায়।

ডাংধরা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লুৎফর রহমান জানান, রোপা আমন ধান কাটার পর বেশ কিছু দিন ধরে বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসেনি। হঠাৎ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হাতির পাল প্রথমে পাথরেরচরের দিকে ছুটে আসে। এ সময় ওই গ্রামের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। হাতির পাল গ্রামের খোরশেদ আলম, সাইদুর রহমান, কিসমত আলী, আবদুল খালেক, ইসমাইল হোসেন, রহম আলী, মেরাজ উদ্দিনের ২০টি বসতবাড়ি তছনছ করে। এ ছাড়া আবদুল মোতালেব, সাইদুর রহমান ও ফরজ উদ্দিনের বোরো ধানের বীজতলা ও সেচযন্ত্রে পাঁচটি ঘর তছনছ করে। হাতির পাল গ্রামের কয়েক একর জমির সরিষাখেত, গম ও আখখেতসহ বিভিন্ন খেতও নষ্ট করেছে।

মধ্যরাতে হাতির পাল পাশের গ্রাম মাখনেরচর ঢুকে আলতাফ উদ্দিন ও মহিরউদ্দিনের ঘরবাড়ি তছনছ করে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাখনেরচরে অবস্থান করে বেলা একটার দিকে হাতির পাল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালুঘাট পাহাড়ে চলে যায়।

পাথরেরচর গ্রামের মেরাজ উদ্দিন বলেন, হাতির পাল তাঁর দুটি ও তিন ছেলের ছয়টি টিনসেড ঘর ভেঙে ফেলেছে। এ সময় তাঁরা আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। তিনি বলেন, এর আগেও এলাকায় হাতির তাণ্ডবে বাড়িঘর ও খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। আক্রমণ থেকে বাঁচতে একাধিকবার স্থানীয় সাংসদ, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকজনকে জানানোর পরও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। 

ডাংধরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রশিদ জানান, রোপা আমন ধান কাটার পর বেশ কিছু দিন ধরে হাতির পাল লোকালয়ে আসেনি। হঠাৎ করে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে হাতির পাল ওই দুটি গ্রামে আক্রমণ চালায়। ওই সব গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় হাতির আক্রমণ বেশি হচ্ছে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষায় ওই সব গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জের ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, সীমন্তবর্তী অন্ধকারাছন্ন গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা বুনো হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার অন্যতম উপায়। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।