জলাবদ্ধতায় দুই হাজার একর জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা

বোরো লাগানোর মৌসুম শুরু হলেও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি হাওরে জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে ধানগাছের চারা লাগাতে পারছেন না কৃষকেরা। হাওর থেকে পানি নামার, খালে পলি পড়ায় ও চলাচলের জন্য বাঁধ দেওয়ার কারণে দুই হাজার একরের বেশি জমি অনাবাদি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ও ফেনারবাক ইউনিয়নে এই পাঁচটি হাওর অবস্থিত। এর মধ্যে ভীমখালি ইউনিয়নে পড়েছে ভান্ডা হাওর, মল্লিকপুর হাওর ও জোয়ালভাঙা হাওর; ফেনারবাক ইউনিয়নে রয়েছে ছয়হারা ও ধলামাখনা হাওর। এই হাওরগুলোতে এলাকার ২০টি গ্রামের কৃষকদের প্রায় চার হাজার একর জমি আছে। এসব জমিতে কেবল বোরো ধানের আবাদ হয়।

ভীমখালি ইউনিয়নের ভান্ডা হাওর এলাকার স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, শুকনো মৌসুমে এসব হাওর থেকে পানি এলাকার বিনাজুড়া গ্রামের পাশের খাল, ফেনারবাক গ্রামের পাশের মইশাজুড়ি খাল ও লক্ষীপুর এলাকার লেঞ্জিখারা খাল হয়ে কানাইখালি নদীতে পড়ে। পানি নেমে গেলে কৃষকেরা জমিতে ফসল লাগান। কিন্তু এই তিনটি খালের বেশ কিছু অংশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ফেনারবাক ও লেঞ্জিখারা খালের দুটি স্থানে চলাচলের জন্য দুই বছর আগে স্থানীয় লোকজন বাঁধ দিয়েছেন।

তাঁরা আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষ চাঁদা তুলে সেচ পাম্প দিয়ে হাওরে পানি নিষ্কাশন করে জমিতে বোরো ধান রোপণ করছেন। এ জন্য প্রতিটি হাওরে চার-পাঁচটি করে পানি সেচের যন্ত্র লাগানো হয়। প্রতিটি যন্ত্রের জন্য দৈনিক সাড়ে ৬০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। হাওরে যেসব কৃষকের জমি আছে, তাঁরা প্রতি ৩০ শতক জমির জন্য ৩০০ টাকা করে চাঁদা দেন। অনেকে অর্থাভাবে পারেন না। এবার পানি নিষ্কাশনের জন্য পাম্প লাগাতে গ্রামে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগায় মৌসুমের শেষ সময়ে ধান লাগাতে হয়। এ কারণে ধান পাকেও দেরিতে।

ফেনারবাক ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাহার বলেন, পলি পড়ে খাল ভরাটের পর স্থানীয় লোকজন চলাচলের জন্য খালে ছোট করে একটি বাঁধ দিয়েছেন। যদি খাল খনন হয়, তাহলে তো বাঁধ সরাতে হবে। এ জন্য আগে খাল খনন করা দরকার।

ভান্ডা গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল মালিক বলেন, ‘হাওরে জলাবদ্ধতার বিষয়টি সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকজন—সবার জানা। কিন্তু সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেনারবাক গ্রামের বাসিন্দা শামিমা শাহরিয়ার বলেন, খাল খনন করে ওই
স্থানে কালভার্ট দিলেই সমস্যা মিটে যাবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, কৃষকদের এই সমস্যার সমাধানে কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছেন তাঁরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল হাসেম বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে পুরোদমে বোরো ধান লাগানো শুরু হয়নি। এই মুহূর্তে এটাকে আমি জলাবদ্ধতা বলব না। আরও ১৫ দিন পরে যদি পানি না নামে, তাহলে জলাবদ্ধতা বলব। তার পরও এই হাওরগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব।’