আত্মসমর্পণের পর মেয়র আরিফুল কারাগারে

.
.

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির নেতা আরিফুল হক চৌধুরীকে গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হবিগঞ্জ আমলি আদালত-১-এ আত্মসমর্পণের পর জামিনের আবেদন করেছিলেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টায় আমলি আদালতে উপস্থিত হন আরিফুল হক। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিচারক বেগম রোকেয়া আক্তার এজলাসে এলে কিবরিয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মেয়র আরিফুল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ও বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আবেদনের ওপর শুনানিতে আরিফুলের পক্ষে মঞ্জুর উদ্দিন শাহীন, চৌধুরী আশরাফুল বারী, সালেহ উদ্দিন আহমেদসহ ১০-১২ জন আইনজীবী বলেন, আরিফুল হক সিটি করপোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র। তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তবে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি আকবর হোসেন জিতু, বাদীপক্ষের নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী এই জামিনের বিরোধিতা করেন। ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি নামঞ্জুর করে আরিফুলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর পরপরই বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেটের মেয়রকে।
কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে গত ১৩ নভেম্বর আদালতে তৃতীয় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুননেসা পারুল। এতে আরিফুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছসহ নয়জনকে নতুন করে অভিযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে এই মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৫ জনে দাঁড়াল। আর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংখ্যা ২২ জন।
গত রোববার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ একই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক তাঁকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার: ‘আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়া আর সিটি করপোরেশনে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টাটাই আমার জন্য কাল হয়েছে।’
সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ১৩ নভেম্বর এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন মেয়র আরিফুল। ওই দিন থেকে টানা প্রায় দেড় মাস আত্মগোপনে থাকার পর গতকালই প্রথম প্রকাশ্যে দেখা যায় তাঁকে।
আত্মসমর্পণ করতে সকাল সাতটায় আরিফুল হক সিলেট থেকে হবিগঞ্জ রওনা হন। আদালতপাড়ায় গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় ওই ষড়যন্ত্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যাঁরা এ ষড়যন্ত্র করেছেন, তাঁদের বিচার আল্লাহ করবেন।’ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি আরও বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই আদালতে আত্মসমর্পণ করছেন তিনি।
মেয়র কথা বলার একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সিলেট সিটি করপোরেশনকে নিজের পরিবার অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আদালত যদি আমাকে জেলে পাঠিয়ে দেন, তবে আমার বৃদ্ধ মা, অসহায় সন্তানদের সিলেটবাসীর কাছে রেখে গেলাম। সিলেটবাসী আমার পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবেন। ইনশা আল্লাহ সত্যের বিজয় হবেই।’