ছয়জনের ফাঁসি, দুজনের যাবজ্জীবন

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম বিভাগের সহকারী হিসাবরক্ষক গোলাম সামছুল হায়দারকে হত্যার দায়ে তাঁর দুই সহকর্মীসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুরউদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম বিভাগের অফিস সহকারী হাফিজুল হোসেন ও হিসাবরক্ষক মো. আবদুল লতিফ, এজি অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট আনোয়ার হোসেন সরকার এবং বাবুল ওরফে তপন চক্রবর্তী, ওয়াসিম ও কাজল মিয়া। যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুজন হলেন ভাড়াটে খুনি শামসুল আলম ও রাজন মিয়া। এ দুজনকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁদের আরও এক বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। মামলার অপর আসামি রানা মিয়া বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় তাঁকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়। জামিন পাওয়ার পর চার আসামি লতিফ, হাফিজুল, তপন ও রাজন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা চার আসামিকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়।
প্রতিক্রিয়ায় নিহত হায়দারের স্ত্রী লায়নুর নাহার আরজুমান হায়দার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৩ সালে মামলাটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হয়। প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। তিনি পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান।
২০০৬ সালে গোলাম সামছুল হায়দারকে মতিঝিলে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। রায়ে বলা হয়, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষÿআসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ৪৫ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পলাতক আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার অথবা আত্মসমর্পণ করার পর থেকে তাঁদের রায় কার্যকর হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, লতিফ ও হাফিজুল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টেলিকম কার্যালয়ের এনসি প্যাক ব্যাটারি কেনার জন্য কোটি টাকার একটি ভুয়া বিল ভাউচার এজি অফিসে জমা দেন। এজি অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট আনোয়ার হোসেন সরকার নিজে উদ্যোগী হয়ে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাদ দিয়ে মের্সাস হারুন এন্টারপ্রাইজের নামে বিলটি পাস করিয়ে ৯৪ লাখ টাকার একটি চেক দেন, যেটি নিয়েছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক হারুন অর রশিদ। ২০০৬ সালের মার্চে একটি ব্যাংক থেকে ওই টাকা তুলে আসামিরা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় হাফিজুলকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় নিহত সামছুল হায়দারকে নিয়োগ করা হয়। এর জের ধরে ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মতিঝিল এজিবি কলোনির সামনের রাস্তায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে সামছুল হায়দারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই আবুল কালাম আজাদ মতিঝিল থানায় মামলা করেন। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষেÿ মামলা পরিচালনা করেন আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া।