ভোলার চার উপজেলায় এসি ল্যান্ড নেই ১৫ বছর

ভোলার দুটি উপজেলায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং চারটি উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে সহকারী কমিশনারের (এসি ল্যান্ড) পদ ১৫ বছর ধরে শূন্য। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন জনগণ।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলায় সাতটি উপজেলা। গত অক্টোবর মাসে ভোলা সদর ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার ইউএনও পদ শূন্য হয়। সদরের ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সদর উপজেলার এবং দৌলতখান উপজেলার ইউএনওকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হয়। দৌলতখান উপজেলার ইউএনও একই সঙ্গে ১৫ বছর ধরে শূন্য থাকা উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের এসি ল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া লালমোহন, তজুমদ্দিন, মনপুরা উপজেলায় ১৫ বছর ধরে এসি ল্যান্ড পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে স্ব-স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসি ল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন প্রজেক্ট ও সংগঠনের সভাপতি থাকেন ইউএনও। যেকোনো কাজে তাঁর অনুমতি নিতে হয়। তাঁকে ছাড়া উপজেলার মাসিক উন্নয়ন সভা, মাসিক শৃঙ্খলা সভা প্রভৃতি সম্ভব নয়।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি উপজেলায় চর ডিমার্কেশন, জরিপ, বন্দোবস্ত, নামজারি (মিউটেশন), মিসকেস, রেকর্ড সংরক্ষণ, সংশোধন, ডিসিআর কাটা, খাজনা আদায়, দখল উচ্ছেদসহ নানা রকম কাজ করতে হয় এসি ল্যান্ডকে। বিশেষ করে জমি ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য নামজারি একান্ত জরুরি।
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুরের আনিসুর রহমান জানান, একটি নামজারি করাতে তাঁদের দুই থেকে তিন মাস লেগে যাচ্ছে। এসি ল্যান্ড থাকলে হয়তো আরও কম সময় লাগত।
লালমোহন বদরপুরের দেবীপুর গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, একবার লালমোহন ভূমি অফিসে যেতে ১৫০-২০০ টাকা খরচ হয়। তার পরও কাজ শেষ না করে ফিরে আসতে হচ্ছে এসি ল্যান্ড না থাকার কারণে।
তজুমদ্দিনের উপজেলা চেয়ারম্যান অহিদুল্যাহ জসিম, মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার, লালমোহন লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, ইউএনও সপ্তাহে দুই-এক দিন ভূমি কার্যালয়ে বসেন। তিনি কিছু নামজারি, মিসকেস ফাইল দেখে চলে যান। ফলে বছরের পর বছর অনেক ফাইল ঘুরছে।
এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় হাজার হাজার একর জমি খাস হয়ে আছে। যা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করছেন। এসব জমি ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া দরকার। কিন্তু এসি ল্যান্ড না থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। নদীভাঙনে প্রতিবছর কী পরিমাণ জমি বিলীন হচ্ছে, কী পরিমাণ মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে তারও কোনো তালিকা হচ্ছে না।
দৌলতখানের ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাঁকে একই সঙ্গে দুটি উপজেলার চারটি পদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর বোরহানউদ্দিন উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে এসি ল্যান্ড আসায় একটি কমে তিনটি হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা বলেন, ‘উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদগুলোতে কর্মকর্তা না থাকায় অনেক কাজে জট পড়ছে। পদগুলো পূরণের জন্য আমরা একাধিক চিঠি লিখেছি। আশা করি পূরণ হবে।’