রাজপথে আওয়ামী লীগের দাপট

সব ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ থাকলেও আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকার সব রাজপথ, সড়কপথ, গলিপথগুলোতে অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটকে ঢাকার কোথাও মিছিল-সমাবেশ কিংবা অবস্থান করতে দেখা যায়নি। তবে ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ ও অলিগলিতে ককটেল ফাটানোর শব্দ পাওয়া যায়।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশের এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, কাকরাইল, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, হাইকোর্ট এলাকা, পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন মোড়ে লাঠি, মোটরসাইকেল ও পিকআপ করে মিছিল করেন দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরে ঘুরে সেসব জায়গায় গিয়ে বক্তৃতা করেন। এর আগে গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রজ্ঞাপন দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছেন ত্রাণমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে থাকেন। তবে অন্যদিনের মতো সেখানে মাইকে কেউ বক্তব্য দেননি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে ট্রাক ও ভ্যান রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ইট ও বালুর ট্রাক বাড়ি সংস্কারের জন্য খালেদা জিয়া এনে রেখেছেন।
গতকাল রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। কিন্তু সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন। এটি ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন কি না, জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কোথাও কোনো স্লোগান-মিছিল হচ্ছে না। এই অবস্থান ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনও নয়।’
এরপর সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘আইন মেনেই নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও আমরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে বসে থাকব, এ ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকার দেয়নি।’
বেলা দেড়টার সময় বাংলাদেশ স্বাধীনতা লীগের ব্যানারে ১২টি পিকআপ ভ্যানে ব্যান্ড পার্টি, ঢোল-তবলা ও হিন্দি গান বাজিয়ে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় বিশাল মিছিল বের করা হয়। তারা সবাই আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে আবদুস সোবহান গোলাপের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, যাঁরা পিকআপ ভ্যান নিয়ে মিছিল করছেন তিনি তাঁদের চেনেন না।
এ ছাড়া ‘গণতন্ত্র দিবস’ পালন উপলক্ষে সকালে কাকরাইলে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের একটি বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। একই সময়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ মিছিল করে।
সকাল নয়টা থেকে শাহবাগ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জমায়েত ছিল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে মিছিল করে যোগ দেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। দুপুর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন তাঁরা। কলাবাগান এলাকায় সকাল ১০টায় লাঠি মিছিল করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। তিতাস গ্যাসের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ, মৎস্য ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।
আওয়ামী লীগের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগরের ১৬টি স্থানে অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের। তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দাবি করেছেন, রাজধানীর ২০০টি স্থানে অবস্থান নেন তাঁদের নেতা-কর্মীরা।