বিচার হলো না চার বছরেও

কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার চতুর্থ বার্ষিকীতে গতকাল বুধবার আবারও হত্যাকারীর বিচার দাবি করা হলো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে আদালতে দুই দফায় সাক্ষ্য দেওয়ার পরও বিচার না পেয়ে বেশ কিছুদিন থেকে হতাশায় ভুগছে ফেলানীর পরিবার। গতকাল বুধবার তাদের বাড়ির সামনের চত্বরে এক স্মরণসভায় সেই হতাশার কথাই জানাল তার পরিবার।
নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের অনন্তপুরে ফেলানীর বাড়িতে স্মরণসভার আয়োজন করে ‘আশার আলো’ নামে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এতে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ সংগঠনটির পরিচালক বিশ্বজিৎ বর্মণ ও ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বক্তব্য দেন। ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে ফেলানীর বাবা বলেন, ‘মাইয়্যাক তো আর ফিরি পাবার নই। বিচারটা যেন পাই।’ তিনি বলেন, ‘এই দিনে অমিয় ঘোষ আমার মেয়েক পাখির মতো গুলি করি মারছে। দুইবার বিএসএফের আদালতে অমিয় ঘোষকে শনাক্ত করি সাক্ষী দিছি। আইজো ম্যাইয়া হত্যার বিচার পাই নাই।’
স্মরণসভার পর দুপুরে ফেলানীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল ও দরিদ্রদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় দালালদের মাধ্যমে অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি আসছিল ফেলানী। ভোরে মই দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত হয় সে। এরপর তার দেহ চার ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকে। এ হত্যাকাণ্ডে তীব্র সমালোচনা হয় দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মীরা সরব হয়ে ওঠেন। বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলায় বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় ওই আদালত।
পুনর্বিচারের দাবিতে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম। পরে বিজিবির সঙ্গে বৈঠকের পর গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর আবার বিচারকাজ শুরু করে বিএসএফ। একই বছর ১৭ নভেম্বর ফেলানীর বাবা বিএসএফের বিশেষ আদালতে অমিয় ঘোষকে অভিযুক্ত করে পুনরায় সাক্ষ্য দেন এবং তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। ২০ নভেম্বর বিচারিক কাজ চলার সময় অমিয় ঘোষ আদালতে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চার মাসের জন্য বিশেষ আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। এ বছর ২৫ মার্চ পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা।