সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে আবারও জাহাজ চলছে

তেলের ট্যাংকার ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবন থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
তেলের ট্যাংকার ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবন থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

সুন্দরবনের ভেতরে তেলের জাহাজডুবির এক মাস পেরোনোর পরপরই নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন জাহাজমালিকেরা। আর সরকারি সংস্থাগুলো আগের মতোই নীরব দর্শকের ভূমিকায়। সরকারের তরফ থেকে জাহাজ চলাচল তদারকির কাজে কোস্টগার্ড ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ছিল। গত দুই দিনে বন বিভাগ ছাড়া কোনো সরকারি সংস্থাই জাহাজ চলাচল তদারকির কাজে নামেনি।
অনুমতি দেওয়ার প্রথম দিন গত বুধবার সন্ধ্যার পর একযোগে ১২টি জাহাজ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে মংলা বন্দরের দিকে যেতে দেখেন বন বিভাগের লোকেরা। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে বন বিভাগের কর্মীরা একটি নৌযান আটক করেন। ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল (ফ্লাইএ্যাশ) নিয়ে আসা শ্যামলি-১ নামের ওই জাহাজটিকে তাঁরা কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু কোস্টগার্ড ওই জাহাজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে মংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম অঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আলাউদ্দিন নয়ন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এখনো নিয়ম ভাঙার অপরাধে কোন জাহাজের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড কী ব্যবস্থা নেবে, তার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাই জাহাজটিকে আবারও চ্যানেলের বাইরে নিয়ে রেখে আসা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনে জাহাজ চলাচল তদারকির জন্য কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএকে নিয়োজিত করার জন্য ইতিমধ্যে সংস্থা দুটির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা গতকাল থেকেই দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। আজ থেকে তাদের জনবল আরও বাড়বে বলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে যে সোয়া ৩ লাখ লিটার তেল ছড়িয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৭০ হাজার লিটার তেল অপসারণ করতে পেরেছে স্থানীয় লোকজন। তেল বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই তেলের ৩ থেকে ৫ শতাংশ বাষ্পীভবন হয়ে গেছে। তবে তা সুন্দরবন এলাকার বায়ুমণ্ডলে ভারী বস্তুকণা হিসেবে ভাসছে। বর্ষা এলে বৃষ্টির সঙ্গে তা আবার সুন্দরবনেই ছড়িয়ে পড়বে। বাকি আড়াই লাখ লিটারেরও বেশির ভাগ তেল এখনো সুন্দরবনের প্রতিবেশব্যবস্থায় রয়ে গেছে।
এই তেল অপসারণে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পদ্মা অয়েল থেকে বনজীবীদের সংগ্রহ করা তেল কেনার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। আর জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় ঢেউয়ের আঘাতে এই তেল বনের খালের আরও ভেতরে ঢুকে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৩ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের তেল ছড়িয়ে যাওয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তেলের একটি অংশ বনের খালের মধ্যে আটকে গেছে। স্থানীয় বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খালের শেষ মাথার বিলগুলোতেও বিপুল পরিমাণ তেল আটকে আছে। দুর্গম ওই সব এলাকায় সাধারণত কেউ যায় না। এ কারণে গ্রামবাসী সেখানে তেল তুলতে যেতে পারেনি।
এদিকে বন বিভাগের যে ৩০০ নৌকাকে তেল উত্তোলনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারাও কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রায় ৭০ হাজার লিটার তেল কিনেছে। ওই তেল কেনা বন্ধ থাকায় গ্রামবাসীও এখন আর তেল উত্তোলন করছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কোনো গ্রামবাসী তেল উত্তোলন করলে তা পদ্মা অয়েলের মাধ্যমে কেনার সুযোগ আছে। বন বিভাগ এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
গত ৯ ডিসেম্বর ট্যাংকার দুর্ঘটনাটি ঘটে। আজ এর এক মাস পূর্ণ হলো।