মুটিয়ে যাওয়ার এতো সমস্যা!

বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু স্থুলতার সমস্যায় ভুগছে
বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু স্থুলতার সমস্যায় ভুগছে

দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছেন? খুব দুশ্চিন্তা? মুটিয়ে যাওয়া বা স্থূলতা এখন শুধু আপনার একার সমস্যা নয়। স্থূলতা ইতিমধ্যেই একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।

ওই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ২.১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি মানুষ স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ মোটা। অবাক ব্যাপার হল, বিশ্বে মোটা মানুষের সংখ্যা অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যার আড়াই গুণ। শুধু তাই নয়, স্থূলতা বিশ্বে মৃত্যু​র সংখ্যা শতকরা পাঁচ ভাগ বাড়ানোর জন্য দায়ী। আর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে বিশ্বের ৪১ ভাগ মানুষ স্থূলতার সমস্যায় ভুগবেন।

ওই গবেষণার আরও দেখার হয়েছে, যুদ্ধ আর ধূমপানের পর মুটিয়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়। স্থূলতার কারণে প্রতিবছর দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক কোটি ৫৬ লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়, যা আফ্রিকা মহাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সমান।

আর বিশ্বের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের ২-৭ শতাংশ কেবল স্থূলতার পেছনেই ব্যয় করতে হয়। এই মুটিয়ে যাওয়া দুই ধরনের ডায়াবেটিকস হওয়ার প্রধান কারণ। ১৯৮৫ সালে স্থূলতা কারণে প্রতি ১০ লাখে ৩০ জন ব্যক্তি ডায়াবেটিকসে ভুগতেন। বর্তমানে তা ৩৮২ জন আর ২০৩৫ সালে দাঁড়াবে ৬০০ জনে। শঙ্কা এখানেই শেষ নয়। স্থূলতার সমস্যা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বইতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি আরও বেশি।

ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোতে স্থূলতার হার বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ান, জার্মানির, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকান মতো মাথা পিছু উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে স্থূলতার হার বেশি।
স্থূলতার কারণে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া এবং ব্যবসার ব্যয় বাড়ায় বৈশ্বিক জিডিপির ২ দশমিক ৮ ভাগ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপার হলো, উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থূলতার সমস্যা দ্রুত বাড়ছে। যেখানে ১৯৯০ থেকে ২০১০ এই ২০ বছরে উন্নত দেশগুলোতে স্থূলতা বেড়েছে ১৭ শতাংশ, সেখানে ওই সময়ের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থূলতা বেড়েছে ৯০ শতাংশ! কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, ভয়াবহ রূপে ছড়িয়ে পড়া এই সমস্যার সমাধানে মাত্র পাঁচ শ কোটি ডলার খরচ করা হচ্ছে, যা স্থূলতার কারণে হওয়া বৈশ্বিক আর্থিক ক্ষতির মাত্র দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশের স্থূলতার চিত্র নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন। ১৯৮০ থেকে ২০১৩ -এই ৩৩ বছরে বাংলাদেশে স্থূলতার চিত্র ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই গবেষণার তথ্য, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের শতকরা ৭ শতাংশ বয়স্ক ও ৩ শতাংশ শিশু স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনধারী ছিলেন। ২০১৩ সালে এখন দেশে স্থূলতার বা অতিরিক্ত ওজনধারী বয়স্কদের হার শতকরা ১৭ ভাগ। এ ছাড়া দেশের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু এ সমস্যায় ভুগছে।
সমস্যা বড় আকারে ছড়িয়ে পড়লেও সেটি দূর করার কিছু পথ বাতলে দিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা। স্থূলতা দূর করতে তাঁরা ১৮ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নিয়মিত পর্যাপ্ত হাঁটা চলা, সাইকেল চালানো ও গণপরিবহন ব্যবহার করা। উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার যেমন ফাস্ট ফুড ও মদ জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা এবং কাজের পরিবেশকে স্বাস্থ্য সম্মত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থূলতা বা মুটিয়ে যা​ওয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি ও পারিবারিক শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে ওই গবেষণায়।