খাল দখল করে কালভার্ট নির্মাণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় নিজের বালুমহালে গাড়ি পরিবহনের সুবিধার্থে এক ব্যবসায়ী খাল দখল করে সরু কালভার্ট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সোহাগপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শফিউল আলম এ কালভার্ট নির্মাণ করছেন।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, খালটির মাঝখানে কালভার্ট নির্মাণের কারণে খালটি সংকুচিত হওয়াসহ এর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু খালটি দখলমুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোনারামপুর সেতুসংলগ্ন ওই খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে
সংযুক্ত। এটি তালশহর গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবীনগরের বড়াইল গ্রাম হয়ে তিতাস নদীতে মিলেছে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত এই খালটির মাঝখানে আট ফুট প্রস্থের একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
কালভার্ট নির্মাণকাজের উপঠিকাদার স্থানীয় যাত্রাপুর গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিয়া জানান, কালভার্টটি দৈর্ঘ্য হবে ৬২ ফুট ও প্রস্থ আট ফুট। এটি নির্মাণে প্রশাসনের অনুমতি আছে।
গত বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) সরেজমিন দেখা যায়, সোনারামপুর-তালশহর সড়ক লাগোয়া খালটির সোনারামপুর অংশে বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে। শুকিয়ে যাওয়া খালটির তলায় কালভার্টের ভিত্তি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকেরা ঢালাইয়ের কাজ করছেন। এ সময় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্যবসায়ী শফিউল খালের ওপারের ছয় বিঘা জমি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে তিনি একটি বালুমহাল তৈরি করবেন। ওই বালুমহালে গাড়ি পরিবহনের সুবিধার্থে তিনি খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শফিউল প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। প্রতিবাদ করলেও লাভ হবে না। তাঁর পক্ষে প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে। তা না হলে অন্য গ্রামের লোক আরেক গ্রামে এসে ব্যবসায়িক স্বার্থে কালভার্ট করবে কোন সাহসে।
স্থানীয় তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু শামা জানান, তালশহরসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ মাটি, ইট-বালু ও রড-সিমেন্ট নৌকায় করে মেঘনা নদী হয়ে এই খাল দিয়ে পরিবহন করে থাকে। এখন এ খালের মাঝখানে সরু কালভার্ট নির্মাণ করা হলে ভারী নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সুযোগ পাবে না এলাকাবাসী। এ খাল দখলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফিউল বলেন, ‘আমার করা লিখিত আবেদনে ইউএনও স্যার অস্থায়ী ভিত্তিতে কালভার্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতি পাওয়ার পর কাজ শুরু করেছি।’ পাকা কোনো স্থাপনা অস্থায়ী ভিত্তিতে হতে পারে কি না—জানতে চাইলে তিনি জানান, এই খালে তো আর এখন নৌকা চলে না। শুধু বিলের পানি নামে। পানি নামার ব্যবস্থা রেখেই তো কালভার্ট হচ্ছে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাস দুয়েক হলো আশুগঞ্জে এসেছি।’ তিনি তাঁর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপসহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আট ফুট প্রশস্ত কালভার্ট নির্মাণ করা হলে এটা অন্যায়। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। কিছু করার ক্ষমতা রাখেন ইউএনও স্যার। আমরা তো কালভার্ট নির্মাণকারীদের সঙ্গে লাঠালাঠি করতে পারি না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. মোশাররফ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ওই কালভার্ট নির্মাণ বন্ধে তিনি ইউএনওকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।
জানতে চাইলে ইউএনও সন্দ্বীপ কুমার সিংহ গতকাল বিকেলে বলেন, তিনি কালভার্ট নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাবেন।