পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে ডুবে থাকা চরে ফেরি আটকা পড়ছে। এ কারণে এই পথে কয়েক দিন ধরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে দৌলতদিয়া চ্যানেলে একটি ফেরি আটকা পড়ে। পরে উদ্ধারের চেষ্টাকালে ফেরিটি স্রোতে ভেসে যাওয়ায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত খননকাজ (ড্রেজিং) না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেরির কয়েকজন মাস্টার (চালক) বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) গাফিলতির কারণে এই নৌপথে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। নিয়মিত খননকাজ না করায় ‘ডুবোচর’ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় এবং ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চার-পাঁচ দিন ধরে এসব ডুবোচরে যানবাহন বোঝাই ফেরি আটকা পড়ছে। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে রো রো ফেরি আমানত শাহ ১১টি বাস, নয়টি ট্রাক ও চারটি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে নৌ-চ্যানেলে ডুবোচরে আটকা পড়ে। এ সময় ওই নৌপথে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ছয় ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ আইটি-৩৮৯ ও ফেরি কাবেরীর সাহায্যে সেটি উদ্ধার করা হয়।

এর আগে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভাষাশহীদ বরকত ফেরি একই জায়গায় আটকা পড়ে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, চ্যানেলে আটকা পড়ার আশঙ্কায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। দ্রুত চ্যানেল ঠিক করতে বিআইডব্লিউটিএকে বলা হয়েছে। তারা সোমবার রাত থেকে খননকাজ শুরু করেছে।

বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তারিকুল হাসান দাবি করেন, ‘চ্যানেলে এখনো আট থেকে সাড়ে আট ফুট পানি আছে। মূলত প্রচণ্ড স্রোতের কারণে চ্যানেলে ঢোকার পর ফেরি তীরে আটকে যাচ্ছে। আমরা দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ঘাট সোজা এক হাজার ৮০০ ফুট দীর্ঘ নতুন একটি চ্যানেল তৈরি করতে সোমবার রাত থেকে খনন শুরু করেছি। চ্যানেলটি খুলতে আরও পাঁচ দিন লাগতে পারে।’

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে মহাসড়কের চার লেনের পশ্চিমাংশে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। সাতক্ষীরার চকুমারপুর থেকে ১৬টি মহিষ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রাকের চালক আবদুল হামিদ জানান, সোমবার সন্ধ্যার দিকে যানজটে পড়ার পর এখনো ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে আছি। রাখাল নিজাম উদ্দিন জানান, মহিষের ও নিজেদের খাবার নিয়ে খুবই সমস্যায় আছেন।

স্রোতে ভেসে গেছে ফেরি: মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে পাটুরিয়া থেকে ছয়টি বাস, তিনটি ট্রাক ও ছয়টি ছোট গাড়ি নিয়ে ছেড়ে আসা ফেরি খানজাহান আলী দৌলতদিয়া চ্যানেলে ঢোকার পর ডুবোচরে আটকা পড়ে। ফেরিটি উদ্ধারের চেষ্টাকালে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ফেরি তীব্র স্রোতে ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে ভেসে যায়।