'বন্দুকযুদ্ধে' ছাত্রদল নেতা নিহত

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আজহারুল ইসলাম (২৭) গতকাল সোমবার ভোরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার তালা উপজেলায় আধা বেলা হরতাল ডেকেছে উপজেলা ছাত্রদল।
তালা উপজেলার চাঁদপুর এলাকার চিংড়িঘের থেকে গত রোববার ভোরে আজহারুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যরা হলেন একই উপজেলার নাংলা গ্রামের তবিবুর রহমান, সুজনশাহ গ্রামের রিপন শেখ ও চাঁদপুর গ্রামের আবদুল হাকিম।
দেশের বিভিন্ন স্থানে এভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, যারা হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আসক মনে করে, একজন ব্যক্তি, তিনি যত বড় সন্ত্রাসী বা গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত হোন না কেন, বিচারবহির্ভূতভাবে কোনো শাস্তি তাঁর প্রাপ্য হতে পারে না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাতক্ষীরায় আজহারুলকে নিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচজন নেতা-কর্মী যৌথ বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘গুলিবিনিময়’-এর ঘটনায় নিহত হয়েছেন। অন্য চারজন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। সারা দেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জনে।
নিহত আজহারুলের স্ত্রী চম্পা খাতুন গতকাল সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তাঁর স্বামীকে রোববার ভোরবেলা চাঁদপুর এলাকার চিংড়িঘের থেকে গ্রেপ্তার করে তালা থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। স্বামীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। পরে গতকাল ভোরে জানতে পারেন তাঁর স্বামীর গুলিবিদ্ধ লাশ সদর হাসপাতালে রয়েছে।
গতকাল ঢাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজহারুল ইসলামকে রোববার রাতেই বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হতে পারে দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এর আগে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন ।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, একজন ইউপি সদস্যকে হত্যা, পুলিশের ওপর হামলাসহ সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার অভিযোগে গত রোববার ভোরে আজহারুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে আজহারুলকে নিয়ে যৌথ বাহিনী অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে বের হয়। বিভিন্ন স্থানে অভিযান শেষে ভোর পাঁচটার দিকে মাগুরা খেয়াঘাট এলাকায় ৫০-৬০ জনের একটি দল হামলা চালায়। তারা আজহারুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ১০-১২টি গুলি ছোড়ে ও চারটি বোমা ফাটায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ১৫টি গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আজহারুলকে উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পাইপগান, দুটি গুলি ও পাঁচটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান জানান, আজহারুলের বিরুদ্ধে ২০০২ সালে ২৮ জুন ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুর রউফ হত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলাসহ সম্প্রতি সংঘটিত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাতটি মামলা রয়েছে।
ওসি দাবি করেন, বন্দুকযুদ্ধে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল তাজিবুর রহমান ও মো. শাহবুদ্দিন সামান্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এসআই শাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তালা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আনিচুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ও ইসলামকাটি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজাহারুল ইসলামকে জঘন্যভাবে হত্যার প্রতিবাদে আজ সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তালাবাসীকে কালো ব্যাজ ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
নিহত আজহারুল উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের ঘোনা গ্রামের সিরাজউদ্দিন সরদারের ছেলে।