মামলায় মাঠছাড়া বিএনপি

বিএনপি ঘোষিত টানা অবরোধ কর্মসূচিতে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন চলাচল করছে খাগড়াছড়িতে। জেলা ও শহরের রাজপথে দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে না। পুলিশি অভিযান ও মামলার ভয়ে সক্রিয় হতে পারছেন না তাঁরা। তবে জেলা বিএনপির নেতারা নিজেদের এই অবস্থানকে কৌশল বলে দাবি করছেন।
তবে বিএনপি রাজপথে নেই, এটা স্বীকার করতে রাজি হননি জেলার শীর্ষ নেতারা। পুলিশ ও সরকারদলীয় কর্মীদের আক্রমণাত্মক আচরণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তাঁরা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা ও উপজেলার প্রায় এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর পরও মামলা মোকাবিলা করেই বিএনপি রাজপথে আছে।
তবে জেলা বিএনপির কার্যক্রম যে একরকম স্থবির তা স্বীকার করেছেন দলের সাধারণ কর্মীরা। তাঁরা জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুইয়া বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি ছাড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকে আসামি করে পুলিশ ও সরকারদলীয় লোকজন মামলা করেছে। মামলা হয়েছে এমন নেতাদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ভুইয়া এবং দলের সহসভাপতি প্রবীনচন্দ্র চাকমা। ফলে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে সক্রিয় হতে পারছেন না স্থানীয় নেতা–কর্মীরা।
বিএনপির নেতারা জানান, ৫ জানুয়ারি জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আসামি করে মামলা করে ছাত্রলীগ। মূলত এর পরই দলে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবু তালেব জানান, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ বিএনপির তিন শতাধিক নেতা–কর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।
বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল বাহার বলেন, ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ জেলা সদরে সমাবেশের আয়োজন করে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশের ওপর হামলার চেষ্টা চলান। সমাবেশের কয়েকটি মাইক ভাঙচুর করা হয়। বিএনপির ক্যাডারদের হামলায় সাতজন ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মংসাপ্রু মারমা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি থানায় জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এতে নাম উল্লেখ করে বিএনপির ৬০ জন নেতা-কর্মীকে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, এই মামলা পুরোপুরি হয়রানিমূলক। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, ‘৫ জানুয়ারির ঘটনায় আমি খাগড়াছড়িই ছিলাম না। অথচ আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জাড়ানো হয়েছে।’ রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ভুইয়াও একই দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমি ভারতে ছিলাম। ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরেছি। তবে এখনো জেলা সদরে যাইনি। এর পরও আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ৫ জানুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও অপরটি পুলিশ বাদী হয়ে করেছে। এই মামলার কয়েকজন আসামিকেও আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।
খাগড়াছড়ি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, যারা শান্তি বিঘ্নিত করে, ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ এ কাজ করছে।