বিচারক নিয়োগ-প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করা হবে: প্রধান বিচারপতি

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আমাদের সংবিধানে যে বিধান আছে, আলাপ-আলোচনা করে আরও স্বচ্ছ কিছু করা যায় কি না, তা দেখা হবে।’ এ সময় তিনি বিচারক নিয়োগে ভারতে আইন থাকার কথাও উল্লেখ করেন।
আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও স্বাধীন। আমরা একটা পদ্ধতি দাঁড় করিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়োগ পরীক্ষার খাতা দেখেন। এ প্রক্রিয়ায় চুল পরিমাণ ফাঁক নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের উদাহরণও নেই, ভবিষ্যতেও হবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের এবং বিচারকদের সঙ্গে পরামর্শ করে বেঞ্চ গঠন করা হবে। আমি আশ্বস্ত করতে পারি, নিম্ন আদালত মোটামুটি সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে এসে পড়েছে। বদলি এবং অন্যান্য বিষয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়েই করা হবে।’ আদালতের অবকাশ কমানোর বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘ছুটি কমাতে ‘হারমোনিয়াস ওয়ে’ বের করার চিন্তা করছি।’

গতকাল শনিবার ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি এস কে সিনহা নামে পরিচিত। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁকে শপথবাক্য পড়ান।

সন্ত্রাস দমনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সত্যিকার অপরাধীদের ন্যূনতম সময়ে শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে সন্ত্রাস দমন করা যাবে না। অভিযোগ গঠনের প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও উপকরণ সংগ্রহে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে যথাযথভাবে দক্ষ ও অঙ্গীকারবদ্ধ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি কিছু স্পর্শকাতর মামলায় আমার মনে হয়েছে প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপকরণের অভাবে দণ্ডিতের দণ্ড বহাল রাখা যাচ্ছে না, যেগুলো তদন্ত পর্যায়ে সংগ্রহ করার কথা ছিল।’

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, প্রমাণ সংগ্রহের পরিবর্তে ফৌজদারি তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে পত্রিকায় খবর প্রকাশে অধিক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এটি অধিকাংশ মামলার বিচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। উপযুক্ত আদালতে একটি স্বচ্ছ বিচারের আগে আইনত কাউকে অপরাধী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায় না। প্রচার এড়িয়ে পেশাদার হতে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, অধিকাংশ সময় উন্মত্ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সন্ত্রাস দমনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এস কে সিনহার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার তিলকপুর গ্রামে। তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। এই হিসাবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রধান বিচারপতির পদে থাকতে পারবেন।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ১৯৭৪ সালে সিলেট বারে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ১৯৭৮ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি হন ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রয়াত শিক্ষক ললিত মোহন সিনহা ও ধনবতী সিনহা দম্পতির বড় ছেলে বিচারপতি এস কে সিনহা। তাঁদের গ্রামের বাড়িতে থাকেন তাঁর একমাত্র ছোট ভাই নীলমণি সিনহা। এস কে সিনহার স্ত্রী সুষমা সিনহা। তাঁদের বড় মেয়ে সূচনা সিনহা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে আশা রানী সিনহা ভারতে পড়াশোনা শেষ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।