ছাত্র সংসদ ফির টাকা ব্যয় হচ্ছে অন্য খাতে!

কুমিল্লা নগরের তিনটি সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ ফির নামে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কলেজগুলোতে ১৫ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। এ অবস্থায় ছাত্র সংসদ ফির টাকা অন্য খাতে খরচ করছে কলেজ প্রশাসন। এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করার এখতিয়ার না থাকলেও কলেজ প্রশাসন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই টাকা খরচ করছে।
সংশ্লিষ্ট কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে বর্তমানে ২২ হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ফি বাবদ চলতি শিক্ষাবর্ষে জমা হয়েছে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৫ টাকা। ১৯৯৮ সালের পর ওই কলেজে কোনো ধরনের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। বর্তমানে ওই কলেজের ছাত্র সংসদের তহবিলে জমা আছে ১৫ লাখ ৯০ হাজার ২৩১ টাকা।
কুমিল্লা সরকারি কলেজে ১৯৯৬ সালের ৩১ অক্টোবরের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। সেখানকার ছয় হাজার ৩৬০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ বছর এক লাখ ৫৯ হাজার টাকা আদায় করা হয়। বর্তমানে ওই তহবিলে জমা আছে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৩ টাকা।
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না ১৫ বছর। এ কলেজের তিন হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চলতি শিক্ষাবর্ষে ছাত্র সংসদ ফি আদায় করা হয় ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে তহবিলে জমা আছে এক লাখ চার হাজার ২৫৪ টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর একাধিক শিক্ষক প্রথম আলোকে জানান, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, সরস্বতী পূজা, বনভোজন ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে ছাত্র সংসদ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে কলেজ প্রশাসন। অথচ নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকলে ওই টাকা খরচ করার এখতিয়ার প্রশাসনের নেই। এতে করে ওই খাতের টাকা খরচ করা নিয়ে বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ রয়েছে। আদায় করা টাকা এভাবে খরচ না করে সংরক্ষণ করা উচিত।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একজন কর্মচারী জানান, ছাত্র সংসদের ফির তহবিল থেকে পত্রিকার বিল ও জাতীয় দিবসগুলোতে টাকা খরচ করা হয়।
কুমিল্লা সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) আতিকুর রহমান খান জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে ওই টাকা খরচ করছে। নির্বাচিত সংসদ না থাকলে ওই টাকা কোনোভাবেই উত্তোলন করা যায় না।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দুভূষণ ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় আমরা ছাত্রীদের কল্যাণে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করি। ওই কমিটির মাধ্যমে ছাত্র সংসদের টাকা খরচ করা হয়। বাৎসরিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই টাকা খরচ করা হয়।’
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আছাদুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র সংসদ তহবিল থেকে টাকা খরচ করার কোনো এখতিয়ার নেই। আমি এখানে সদ্য যোগ দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’