মাদারীপুরে যৌনপল্লিতে হামলার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১৭

মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারের যৌনপল্লিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় মামলা করেছে। মামলায় অজ্ঞাত দুই হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে ইসলাহে কওম পরিষদ মঙ্গলবার রাতে পুরান বাজারের উত্তরণ ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে যৌনপল্লিতে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রায় দেড় বছর ধরে এসলাহে কওম পরিষদ মাদারীপুরের পুরান বাজারের পল্লি থেকে যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদের আন্দোলন করে আসছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ইসলাহে কওম পরিষদ ও যৌনপল্লির প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য শহরের বিশিষ্ট ২০ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি কমিটি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ওই কমিটির সদস্য সাবেক পৌর মেয়র নুরুল আলম বাবু চৌধুরী, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খান, মাদারীপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মিলন ভূঁইয়া, পৌর কাউন্সিলর মো. আক্তার হাওলাদার, মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারসহ কয়েকজন যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে কাউন্সেলিং করতে গেলে পল্লীর লোকজন তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ খবর পুরান বাজার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে যৌনপল্লিতে হামলা চালান। এতে ইসলাহে কওম পরিষদের কোনো নেতা-কর্মী ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলাহে কওম পরিষদের নেতা বোরহান উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ চৌধুরী, মাদারীপুর বণিক সমিতির সহসভাপতি সায়ীদ খান, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মিলন ভূঁইয়া, পৌর কাউন্সিলর মো. আক্তার হাওলাদার, আওয়ামী লীগের নেতা ইরশাদ হোসেন, যুবলীগের নেতা জাহিদুল ইসলামসহ শতাধিক ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ফের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে যৌনপল্লি ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

যৌনপল্লির নেত্রীরা বলেন, তাঁরা ২০০ বছর ধরে মাদারীপুর যৌনপল্লিতে বসবাস করে আসছেন। এখানকার অধিকাংশ সম্পত্তি তাঁদের। হাইকোর্ট গত ২২ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য তাঁদের নির্বিঘ্নে জীবন যাপনে একটি রুল জারি করেন। এর পরও যৌনপল্লিতে আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধর করা হয়।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন তাই হবে। যৌনপল্লিতে হামলার ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।