বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া গেল না

পাইকারি কিংবা গ্রাহক পর্যায়ে এই সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে। দাম বাড়ানোর বিষয়ে চার দিনের এই গণশুনানি গতকাল রোববার শেষ হয়েছে।
গতকাল সকালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও বিকেলে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডেসকো) দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি হয়। সেখানে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের পাইকারি দাম ও সঞ্চালন মূল্যহার বাড়ানো না হলে এর একটি কোম্পানিরও গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো এই সময়ে দরকার নেই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা এস এম শামসুল আলমের জেরার জবাবে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাঈদ সারোয়ারও শুনানিতে একই কথা বলেন। বিআরইবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর জন্য দাম কিছুটা বাড়ানো দরকার।
এর আগে অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে উপস্থাপিত বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বিদ্যমান অবস্থায় দাম বাড়ানোর দরকার নেই। তবে তাঁদের পর্যালোচনা অনুযায়ী পাইকারি পর্যায়ে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং সঞ্চালন মূল্যহার দেড় শতাংশ বাড়ানো হলে কোনো কোনো কোম্পানির গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কিছুটা বাড়াতে হবে বলে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
অবশ্য বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় বিদ্যুতের পাইকারি দামও বাড়ানোর কোনো যুক্তি শুনানিতে টেকেনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পাইকারি পর্যায়ে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। এ বিষয়ে ভোক্তা পক্ষের সব প্রতিনিধি বলেছেন, সরকার দেশে তেলের দাম কমিয়ে কিংবা বেশি দামে তেল বিক্রির মুনাফা থেকে ভর্তুকি দিলে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। এমনকি বর্তমান অবস্থায় বিদ্যুতের দাম কমানো যেতে পারে।
৮ জানুয়ারি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে বিইআরসিকে দেওয়া প্রস্তাবে দাম কমানোর বিষয়ে শুনানি আয়োজনের অনুরোধ করা হয়। গতকালের শুনানিতে সিপিবির নেতা রুহিন হোসেন ওই প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, প্রস্তাবটি তাঁদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
চার দিনের শুনানিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া না গেলেও বিতরণ কোম্পানিগুলো এবারই প্রথম সব ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যান্য সময় যেমন দরিদ্র গ্রাহক (লাইফ লাইন কাস্টমার), কৃষি, সেচ, দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিকে দাম বাড়ানো থেকে রেহাই দেওয়া হলেও এবার দেওয়া হয়নি।
এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বাস্তবে যেহেতু দাম বাড়ানোর যুক্তি তৈরির অবস্থা নেই, সেহেতু এসব ক্ষেত্রকেও প্রস্তাবের অন্তর্ভুক্ত করে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একই উদ্দেশে কোম্পানিগুলো দরিদ্র আবাসিক (লাইফ লাইন) গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের উচ্চসীমা সংকুচিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিদ্যমান মূল্যকাঠামোয় দরিদ্র শ্রেণির গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের উচ্চসীমা নির্ধারিত আছে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত। কোম্পানিগুলো তা পরিবর্তন করে ৩০ ইউনিট করার প্রস্তাব দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই শ্রেণির গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিদ্যমান দাম ৩ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৮৭ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটা করা হলে কোম্পানিগুলোর রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু দরিদ্র গ্রাহকদের মূল্যসুবিধা পাওয়া সীমিত হবে।
গতকাল সাংবাদিকদের বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ বলেন, বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনা ছাড়াও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়।