চট্টগ্রামে সিমেন্ট কারখানার ক্লিংকার টানেলে লাশ!

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকার ডায়মন্ড সিমেন্ট কারখানার এক শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর গতকাল রোববার সকালে পুলিশ কারখানার ক্লিংকার ভাঙার টানেল থেকে আজিজুল হক (৪৫) নামের ওই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে।
গত শুক্রবার সকাল সাতটায় কারখানায় ঢুকলেও বেলা দুইটায় ছুটির পর তাঁকে আর দেখা যায়নি। তবে কারখানার বহির্গমন খাতায় তাঁর সই রয়েছে। ওই সই তাঁর নয় বলে পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি কীভাবে ৯২ ফুট উচ্চতার ক্লিংকার ভাঙার ওই যন্ত্রে পড়লেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
আজিজুল হক স্থানীয় খোয়াজনগর এলাকার ছিদ্দিক আহমেদের ছেলে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম ঘরে তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দ্বিতীয় ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। শুক্রবার কাজ শেষে আজিজুল বাড়িতে ফেরেননি। গত শনিবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে কারখানা চালু থাকা অবস্থায় ক্লিংকার ভাঙার উঁচু টানেলের বহির্গমন পথের মুখে একটি হাত দেখা যায়। তখন কারখানার শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম চন্দ্র দেব জানান, ‘আমরা এসে একটি হাত দেখতে পাই। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বহির্গমন মুখটি খুলে লাশটি বের করা হয়। তখন শ্রমিকেরা লাশটি নিখোঁজ আজিজুলের বলে শনাক্ত করেন। যেহেতু ওই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই, তাই এটি দুর্ঘটনা, নাকি অন্যকিছু—এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা যায়, ক্লিংকার টানেলটি ২৮ মিটার বা ৯২ ফুট উঁচু। খাড়া সিঁড়ি দিয়ে এর ওপরের অংশে উঠতে হয়। ওপরের দুটি ১০ ইঞ্চি পরিমাণ মুখ দিয়ে ক্লিংকার ঢোকে। ওই পথ দিয়ে একজন মানুষের ভেতরে পড়া অসম্ভব বলে জানালেন কাঁচামাল ব্যবস্থাপক শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, আজিজুল নিরিহ প্রকৃতির। তাঁর স্বাস্থ্য ভালো। ওই দুটি ছোট গর্ত দিয়ে তাঁর ভেতরে পড়ে যাওয়া কীভাবে সম্ভব আমরা ভাবছি।’
তবে পাশে টিনে ঢাকা আরেকটি একটু বড় গর্ত রয়েছে। ওই গর্ত দিয়ে একজন মানুষের ভেতরে পড়া সম্ভব বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সিএমপি বন্দর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘মানুষটি কীভাবে সেখানে পড়ল, তার উত্তর খোঁজার জন্য আমরা লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে আপাতত কোনো অভিযোগ করা হচ্ছে না।’
জানা গেছে, ওই সময় কাঁচামাল বিভাগে আজিজুলের সঙ্গে আনোয়ার ও লিয়াকত নামে আরও দুই শ্রমিক কাজ করছিলেন। পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে। এ বিষয়ে ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, হয়তো মাথা ঘুরে কিংবা হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে ক্লিংকার ক্র্যাশিং যন্ত্রে তিনি পড়ে গেছেন। তাঁদে মাঝেমধ্যে ওই যন্ত্রের প্রবেশমুখ দেখতে হতো।

বরকলে বিমলেন্দু হত্যা লাশ উদ্ধার করা যায়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি
রাঙামাটির বরকলে অপহূত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিমলেন্দু চাকমার লাশ গতকাল রোববারও উদ্ধার করা যায়নি। এদিকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) অপহরণে নেতৃত্বদানকারী জ্যোতির্ময় চাকমা তাদের কর্মী নয় বলে জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে জ্যোতির্ময় চাকমার নেতৃত্বে একদল দুষ্কৃতকারী সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিমলেন্দু চাকমাকে (৪০) অপহরণ করে। ওই রাতেই বিমলেন্দুকে হত্যা করা হয় বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন। গতকাল জ্যোতির্ময় চাকমাকে জনগণের হাতে হস্তান্তর করার কথা বলেছিলেন ইউপিডিএফের নেতারা। তবে তাঁদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হওয়ায় হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানা গেছে।
বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘ইউপিডিএফের নেতারা অপহরণে নেতৃত্বদানকারী জ্যোতির্ময় চাকমাকে জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সে অনুযায়ী বরকল থানার কয়েকজন পুলিশ নিয়ে সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি চাকমাসহ গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে ইউপিডিএফের নেতারা আমাকে মুঠোফোনে জানান, তাঁদের মধ্যে জ্যোতির্ময়কে হস্তান্তরের ব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। সে কারণে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’
বরকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, পুলিশের একটি দল আসামিকে আনতে গেলেও তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। তবে বিমলেন্দু চাকমার লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে ইউপিডিএফের নেতা বিশাল চাকমা গতকাল রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি অপহূতকে আর ফেরত পাওয়া যাবে না বলে লোকজনকে বলেননি। তিনি জ্যোতির্ময় চাকমার বিরুদ্ধে লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। জ্যোতির্ময় চাকমা ইউপিডিএফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি করে বিশাল চাকমা বলেন, ‘তাঁকে বেশ কয়েক মাস আগে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আর আমাদের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত নন।’ সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিমলেন্দু চাকমাকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটি। গতকাল কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা, অপহরণ ও হত্যাকে ‘না’ বলতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সব দল ও গোষ্ঠীকে জনগণের দাবির প্রতি সম্মান রেখে রাজনৈতিক সহিংসতামুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।