দলীয় কারণে নয়, ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ড?

ফুরকান উদ্দিন মৃধা
ফুরকান উদ্দিন মৃধা

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম দলীয় কোন্দলে নয়, তাত্ক্ষণিক দুর্ঘটনা অথবা ব্যক্তিপর্যায়ের ক্ষোভের কারণে খুন হয়েছেন। ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমনটা দাবি করা হয়েছে। ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান আকন্দ বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল ছিল বলে তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, গতকাল রোববার যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা তাত্ক্ষণিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এবং একটি দুর্ঘটনা। থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, এখানে দলের কোনো কোন্দল ছিল না। হয়তো তাঁদের দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, যেটা দল জানে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় একটি সূত্র জানায়, সেলিমের সঙ্গে আজিজুল হক খানের বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগে আজিজুলের কোনো পদ ছিল না। পরে ২০১২ সালে পাহাড়ি সেলিমের হাত ধরেই গামারীতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। কিন্তু কী কারণে তাঁদের মধ্যে এ রকম বিরোধ সৃষ্টি হলো, তা বোধগম্য নয়। গত শুক্রবার উপজেলার আনন্দ স্কুল প্রকল্পের শতাধিক শিক্ষক স্থানীয় সাংসদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের কাছে সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সেলিম শিক্ষকদের বেতনের চেক নিজের কাছে রেখে তাঁদের নামমাত্র টাকা দিয়ে বাকিটা নিজে আত্মসাত্ করেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর হোসেন ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাহার আলীর সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিমন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের নালিশ দেওয়ার বিষয়ে আজিজুল হকের ভূমিকা থাকতে পারে বলে ওই সূত্রটি জানায়। এ জন্য আজিজুলের প্রতি সেলিমের ক্ষোভ ছিল। ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পলাতক অনেকে ঘটনার পর থেকেই আজিজুল হক পলাতক। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সীমান্তবর্তী গামারীতলা ইউনিয়নের পশ্চিম গামারীতলা সাতালি পাড়াসহ চার-পাঁচটি গ্রামের পুরুষেরা পুলিশি অভিযানের ভয়ে পালিয়ে রয়েছেন।

সকল-সন্ধ্যা অবরোধ
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ ডেকেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে তিন দিনের শোক পালন করার কর্মসূচি দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

লাশ দাফন
ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফুরকান উদ্দিন মৃধার লাশ ধোবাওড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে উপজেলার খেলার মাঠে প্রথম জানাজা ও সন্ধ্যায় ঘিলাগড়া গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানায় উপজেলা আওয়ামী লীগ।

ছয়জন আটক
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মিলন (২৫), মো. ইদ্রিস আলী (৩২), মুরাদ হোসেন (২০) ও আবদুল জলিলের (২৮) বাড়ি পশ্চিম গামারীতলা গ্রামে। বাকিরা হলেন এমরান হোসেন ও আল আমিন। এমরানের বাড়ি সাতালিপাড়া ও আল আমিনের বাড়ি ছোট মুন্সিপাড়া গ্রামে।
গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফুরকান উদ্দিন মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম (৪০) নিহত হন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।