বন্ধন পরিবহন থেকে সাত কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী ‘বন্ধন’ পরিবহন কোম্পানির যাত্রীবাহী বাসগুলো থেকে আওয়ামী লীগের নেতা শামীম ওসমানের ছত্রচ্ছায়ায় তাঁর সমর্থকেরা গত সাড়ে চার বছরে সাত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওই কোম্পানির ৩২ জন বাসমালিক।

বাসমালিকেরা গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিটি পেশ করেন।

এই অভিযোগের আগে গত ২১ আগস্ট ‘নসিব’ পরিবহন কোম্পানির মালিকেরা শামীম ওসমানের শ্যালক এহসানুল হক ওরফে নিপুর বিরুদ্ধে একই সময়ে কমপক্ষে ছয় কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।

বন্ধনের বাসমালিকেরা স্মারকলিপিতে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে তাঁদের বাস চলাচল শুরু হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ইব্রাহিম চেঙ্গিস তাঁর ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বন্ধন পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেন। তাঁকে সহায়তা করেন উত্তর চাষাঢ়া এলাকার মৃত আবদুর রহিমের ছেলে শাহীন রেজা ওরফে সানি, দেওভোগ নাগবাড়ী এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে মো. আইউব আলী ও বন্দর উপজেলার উইলসন রোড এলাকার আবদুল লতিফ শেখের ছেলে নাসির শেখ। তাঁরা মালিকদের ডেকে এনে অস্ত্রের মুখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এঁরা শামীম ওসমান ও সাংসদ নাসিম ওসমানের লোক বলে পরিচিত।

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, ইব্রাহিম চেঙ্গিস ও শামীম ওসমানের লোকেরা গত সাড়ে চার বছরে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন হারে চাঁদা আদায় শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত আছে। হিসাব অনুযায়ী, ইব্রাহিম চেঙ্গিস বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত চাঁদা বাবদ পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া, চেঙ্গিস তাঁর আপ্যায়ন খরচ বাবদ নিয়েছেন ১৭ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। চেঙ্গিসের ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বেতন হিসেবে নেওয়া হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। চেঙ্গিসের অনুগত চার ব্যক্তি ম্যানেজার শাহ আলম, শাহীন, নাসির ও আইয়ুব আলীর মাসিক সম্মানী বাবদ নেওয়া হয় আরও ৫৬ লাখ টাকা। এ চারজনের মুঠোফোনের বিল বাবদ নেওয়া হয় ৪৮ লাখ চার হাজার টাকা। অন্যান্য সব মিলিয়ে চাঁদাবাজির মোট অঙ্ক দাঁড়ায় সাত কোটি নয় লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ওই সব বিষয়ে ২০১০ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হলেও এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম চেঙ্গিসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। অন্যদিকে শামীম ওসমানের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

স্মারকলিপির ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মনোজ কান্তি বড়াল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।