মালয়েশিয়ায় ৩৮৭ বাংলাদেশি আটক

অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়া সরকার। গতকাল সোমবার পর্যন্ত দুই দিনে দুই হাজার ৪৩৩ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৭ জন বাংলাদেশি। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আটক অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদি বলেন, সারা দেশে ৪০টি অভিযানে আট হাজার ১০৫ জন অভিবাসীর কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকা, কাজের ভুয়া অনুমতিপত্র ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও অবস্থান করায় দুই হাজার ৪৩৩ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৮৭ জন বাংলাদেশি, ৭১৭ জন ইন্দোনেশীয়, ৫৫৫ জন মিয়ানমারের, ২২৯ জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন। অন্যরা কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, চীন, নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিক। ইমিগ্রেশন বিভাগ, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, রেল, সিভিল ডিফেন্স ও ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের দুই হাজার ২০৭ জন কর্মকর্তা অভিযানে অংশ নেন।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের আগস্টে মালয়েশিয়া দেশটিতে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়। এ জন্য কয়েক মাসজুড়ে অবৈধ অভিবাসীদের নাম নিবন্ধন করতে বলা হয়। এরপর সিক্স-পি কর্মসূচির আওতায় তাঁদের বৈধ করা হয়। ওই প্রক্রিয়ায় দুই লাখ ৬৭ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি বৈধ হন। তাঁদের বেশির ভাগই ২০০৭ ও ২০০৮ সালে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন।

ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মালয়েশিয়া ঘোষণা দেয়, নির্ধারিত সময়ে যাঁরা বৈধ হবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে পরে অভিযান চালানো হবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়া সরকার। আগামী তিন মাস এই অভিযান চলবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলেছেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। এর পরও ছাত্র ও পর্যটক সেজে অনেক বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় যান। মূলত এখন তাঁরাই আটক হচ্ছেন।

মালয়েশিয়ার পুলিশের ধারণা, দেশটিতে অন্তত চার লাখ অবৈধ অভিবাসী আছেন। এর মধ্যে অন্তত লাখখানেক বাংলাদেশি হতে পারেন।

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এই অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালয়েশিয়া অবৈধ কর্মীদের আগেই বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। সে সময় আমরা আমাদের কর্মীদের বারবার বলেছি, আপনারা বৈধ হন। দূতাবাসে যোগাযোগ করুন। সে সময় প্রায় পৌনে তিন লাখ বাংলাদেশি বৈধ হয়েছেন। কিন্তু অনেকেই সে সময় দালালদের সহায়তা নিয়েছেন। তাঁরা আর বৈধ হতে পারেননি। এখন তাঁরা আটক হচ্ছেন।’ আটক হওয়া বাংলাদেশিদের ব্যাপারে সরকার কী করবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি মালয়েশিয়ার আইনি ব্যাপার। এখানে আমরা কিছু করতে পারি না। তবে আমরা মালয়েশিয়াকে বলেছি, আমাদের কোনো নাগরিকের কাগজপত্র না থাকলে যেন তাঁদের কোনো সাজা না দেওয়া হয়। বরং আমরা তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনব।’