জমি ও খরচ দিলে ভবন সরাবে বিজিএমইএ

রাজধানীর হাতিরঝিলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে বিজিএমইএ ভবন। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ l ছবি: হাসান রাজা
রাজধানীর হাতিরঝিলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে বিজিএমইএ ভবন। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ l ছবি: হাসান রাজা

রাজধানীর কোনো ভালো এলাকায় জায়গা দিলে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা থেকে বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে পারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তারা বলেছে, ভবনটি ভাঙলে তার ক্ষতিপূরণ বা ভবনটি নির্মাণ খরচ বহন করতে হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। 
হাতিরঝিল পরিবেশবান্ধব হয়ে না ওঠার কারণগুলোর মধ্যে বিজিএমইএ ভবন অন্যতম। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনটি অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে জলাধারটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল করে। এখন তা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া প্রকল্প এলাকা আরও সৌন্দর্যময় করতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সামনের বছরের ডিসেম্বরের আগে তা শেষ হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রস্তাব বিষয়ে বিজিএমইএর সঙ্গে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও হাতিরঝিল প্রকল্পের কর্তৃপক্ষগুলোর বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা জায়গা দেওয়া ও ক্ষতিপূরণের কথা বলেছেন।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তিনি সভাপতি হওয়ার আগে প্রস্তাবটি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ভবনের জায়গাটির জন্য বিজিএমইএ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়েছিল। তার পরও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে পারি। ভালো জায়গায় ভবনটি যথাযথভাবে নির্মাণ করে দিলে আমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারি। তবে দেখতে হবে বিজিএমইএর ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয়।’
যোগাযোগ করা হলে রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বলেন, বিজিএমইএ যেহেতু একটি সংগঠন, তাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে তাদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু ভবন নির্মাণ বা ক্ষতিপূরণ রাজউক দিতে পারে না। ভবনটির নকশা অনুমোদন নেই। তা ছাড়া বিজিএমইএ ভবনের বেশির ভাগ তলা বিজিএমইএ অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছে।
হাতিরঝিল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা লিখতে পারেন, বিজিএমইএ ভবন হাতিরঝিল প্রকল্পের কয়েকটি মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে।’ তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবে যে পানির প্রবাহ, তা এ ভবনের জন্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ভবনের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে অনেক বর্জ্য আটকে থাকে। এগুলো শক্ত হয়ে ওই অংশে স্থায়ীভাবে বসেও যায়। যার জন্য খননকাজ করতে হয়।

প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মেজর শাকিল বলেন, চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব নয়। এ জন্য সময় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণে দেড় বছর তো সময় লাগতেই পারে। তিনি বলেন, উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের যে কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে, তার অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।
২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধনের পর যানজট নিরসনে দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজের অংশ হিসেবে দুটি ক্ষুদ্র উড়ালসড়ক (ফ্লাইওভার) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে গত মাসে।
প্রকল্প এলাকার জলাশয়ের পানির গুণমান উন্নত রাখার জন্য ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। সাত বছর আগে এ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা থাকলেও হয়নি। এখন শুরু হলেও শেষ হতে তিন বছরের বেশি সময় লাগবে।
হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় যানজট দূর করতে ইংরেজি ইউ আকৃতির দুটি ক্ষুদ্র উড়ালসড়কের (লুপ) নির্মাণকাজ থমকে আছে প্রায় আড়াই বছর। এর একটি রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশে ৩৫৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং অপরটি মধ্য বাড্ডায় ফ্যাসিলিটিজ টাওয়ারের বিপরীত দিকে ৩০৮ মিটার দৈর্ঘ্যের।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দুটি উড়ালসড়কের জন্য জমির দরকার ৮ দশমিক ৫১ একর। অধিগ্রহণ করা জায়গায় তিনটি তিনতলা ভবনসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা ভবন। সেগুলো উচ্ছেদ করে জায়গা খালি করতে হবে। মেজর কাজী শাকিল হোসেন বলেন, শিগগিরই রাজউকের সঙ্গে যৌথ অভিযানে বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করা হবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বিভিন্ন সময়ের বৈঠক থেকে প্রকল্প এলাকাকে বিনোদন কেন্দ্রস্থল করার একটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়। রাজউক ও এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক বিভাগ সূত্র জানায়, বিনোদনের অংশ হিসেবে নিকেতনে আড়ংয়ের পাশে বাঁধ দিয়ে বড় আকারের এমফি থিয়েটার (উন্মুক্ত গ্যালারি) তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।
প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ-নিরাপত্তা ও গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য একটি ১৫ তলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল নিকেতনের কাছে। কিন্তু সেখানে নির্ধারিত প্রায় দেড় বিঘা জমি নিয়ে মামলা চলতে থাকে প্রায় আড়াই বছর। এখন সেখানে ১৫ তলার পরিবর্তে ১০ তলা ভবন হবে। সেখানে প্রায় ২০০ গাড়ি রাখার ব্যবস্থা হবে। তবে কাজটিতে এখনো হাত দেওয়া হয়নি।
এলজিইডি প্রকল্প পরিচালক কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এমফি থিয়েটারে যেতে হলে ১০ তলা গাড়ি পার্কিং ভবন ব্যবহার করতে হবে। ভবনের ওপরের তলায় থাকবে ব্যবস্থাপনা ইউনিট। নিচে থাকবে গাড়ি পার্কিং স্থান। সেখানে গাড়ি রেখে ওয়াকওয়ে হয়ে এমফি থিয়েটারে যাওয়া যাবে। মূল রাস্তায় যাতে কোনো যানজট না হয়।
বাড্ডা সংযোগ সড়কের কাছে ‘অভয়ারণ্য’ নামে একটি বিচ্ছিন্ন আইল্যান্ড করা হচ্ছে। মূল নকশাতেই এটা রয়েছে। সেখানে ব্যাঙ, পাখি ইত্যাদি থাকবে। যেখানে কোনো মানুষের পদার্পণ থাকবে না। এর কাজ অবশ্য কার্যত শুরু হয়নি। সেখানে প্রকল্পের কিছু মালামাল রাখা হয়েছে। সেগুলো সরিয়ে মাটি সমান করে কাজ শুরু করতে হবে।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মতো দ্বিতীয় পর্যায়েও একটি সেতু (বায়াডাক্ট ৩) নির্মাণের কাজ ৫৫ শতাংশ হয়ে গেছে। গুলশান লেকের সঙ্গে হাতিরঝিলের সংযোগ করতে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।