সমাবর্তন হয় না ১১ বছর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১১ বছরে সমাবর্তন হয়নি। ফলে এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও বর্তমানে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়ার পর আশা ছিল সমাবর্তনের মাধ্যমে মূল সনদ পাব। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সমাবর্তন হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজিবুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং উদাসীনতার কারণেই মূলত সমাবর্তন হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘নানা সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন সমাবর্তন হয়নি। শিগগিরই সমাবর্তন আয়োজনের চেষ্টা করছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর সমাবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৩ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথম, ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় এবং ২০০২ সালের ২৮ মার্চ তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর সমাবর্তন হয়নি।
২০০২ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সমাবর্তনে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়া শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দেওয়া হয়। এরপর সমাবর্তন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মূল সনদপত্রের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের সাময়িক সনদপত্র দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিতপদার্থ, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও বর্তমানে গ্রামীণফোনের পরামর্শক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বরত সালাহউদ্দিন ওরফে বাপ্পি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মানের সাময়িক সনদপত্র দেওয়া হয়, তা তো ঘরে বসেই বানানো যায়। এ জন্য অনেকেই জাল সনদপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করছেন। ফলে প্রকৃত ডিগ্রিধারীদের নানা সমস্যার সমঞ্চুখীন হতে হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহামঞ্চদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সনদপত্রের কাগজের ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ভালোমানের কাগজ সরবরাহ করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্র জানায়, সমাবর্তন না হওয়ায় ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্র আটকে আছে। ২০১০ সালের এক সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের মূল সনদপত্র দেওয়া হচ্ছে।