রাতে গুলি-বোমা ছুড়ে সোনার দোকান লুট, নিরাপত্তাকর্মী নিহত

সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের জিন্দাবাজারে একটি বিপণিবিতানে গতকাল বুধবার রাতে গুলি ছুড়ে ও বোমা হামলা চালিয়ে সোনার গয়নার দোকানে লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় বিপণিবিতানের এক নিরাপত্তাপ্রহরী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাতজন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরে রাত আটটার দিকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত জিন্দাবাজারের নেহার বিপণিবিতানে প্রবেশ করে। এর নিচতলায় সোনার গয়নার দোকান। বিপণিবিতানে ঢুকেই সন্ত্রাসীরা কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। আতঙ্কে ব্যবসায়ীসহ আশপাশের লোকজন ছোটাছুটি করে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এ সময় অস্ত্রধারীদের একপক্ষ সোনার দোকানে লুটপাট শুরু করে। আরেক পক্ষ রাস্তা ও বিপণিবিতান লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছোড়ে। লুটপাটে বাধা দিতে গিয়ে বাদশা মিয়া (৫০) নামের একজন নিরাপত্তাপ্রহরী ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিক্ষিপ্ত বোমা হামলায় সোনার দোকানের দুই ব্যবস্থাপকসহ সাতজন আহত হন। এর মধ্যে সেলিম, পার্থ ও রঞ্জিতকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত বাদশার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় গ্রামে। তিনি নগরের হাওয়াপাড়ায় বসবাস করেন।

বিপণিবিতান-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসীরা কমপক্ষে ৩০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরমা জুয়েলার্স, আল বারাকা ও কমলা ভান্ডার নামের তিনটি সোনার গয়নার দোকানে ব্যাপক লুটপাট করেন। এ ছাড়া কয়েকটি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাজনৈতিক কোনো সহিংসতা ভেবে অনেকেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে দোকানে লুটপাট শুরু হলে আশপাশ এলাকার মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেন। অবশ্য এর আগেই দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

রাত নয়টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নেহার বিপণিবিতানের সামনের রাস্তায় বিচ্ছিন্নভাবে বোমা ফেলা। এর কোনো কোনোটি অবিস্ফোরিত।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বিদ্যুৎ চলে যায়। আর থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে জিন্দাবাজার পয়েন্টে আসতে পুলিশের সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। পার্থ বণিক নামে আহত একজন ব্যবসায়ী জানান, বোমা ও গুলি ছোড়ার পর লুটপাট শুরু হলে অস্ত্রধারীদের ডাকাত বলে শনাক্ত করা হয়। তখন বৃষ্টি ও বজ্রপাত হওয়ায় ঘটনাস্থলে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

এদিকে জুয়েলারি সমিতি রাতে তাৎক্ষণিকভাবে সভা করে আজ নগরে পূর্ণদিবস ধমর্ঘট আহ্বান করেছে।

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এজাজ আহমদ জানান, নগরের চারদিকে নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ নাসিরউদ্দিন মোহামঞ্চদ রাত নয়টার দিকে জানান, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লুটপাটকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অবিস্ফোরিত বোমা পরীক্ষা করতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৯) একটি বিশেষজ্ঞ দল বিপণিবিতানে অবস্থান করছে।