অবরোধ-হরতালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে

স্ত্রীর নামে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজের আসবাব বিক্রির ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন রাজশাহী নগরের বাজেকাজলা এলাকার মানিক চাঁদ। দেড় মাস ধরে তাঁর দোকান বন্ধ। আয়-রোজগার বন্ধ থাকলেও প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। কিস্তি দেওয়ার জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে বেড়াচ্ছেন। 
২০ দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে মানিক চাঁদের মতো রাজশাহী নগরের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী বিপদে পড়েছেন। নগরের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছেন। তাঁরা ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ করেন। গত ৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধ আর হরতালের কারণে তাঁদের ব্যবসায়ে ধস নেমেছে। এখন ব্যবসা করে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, সংসারের খরচ মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে।
নগরের লোকনাথ স্কুলের পাশের বাজারে কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকানের কর্মচারী রিপন আলী বলেন, ঋণ নিয়ে দোকানটি করা হয়েছিল। এ জন্য প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে ঋণের কিস্তি দিতে হয়। আগে প্রতিদিন যে পরিমাণ কাজ হতো তাতে ঋণের কিস্তি দেওয়া কোনো ব্যাপার ছিল না, কিন্তু অবরোধ ও হরতাল শুরু পর শহরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। এখন যে পরিমাণ কাজ হয়, তাতে দোকান খোলাও রাখা যায় না, আবার বন্ধও করা যায় না। এ অবস্থা আরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে ব্যবসাই লাটে উঠবে।
নগরের হাদিরমোড় এলাকার আসবাব ব্যবসায়ী তাঁর ব্যবসা বড় করার জন্য বেসরকারি সংস্থা থেকে তাঁর স্ত্রীর নামে ২৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি ঋণের টাকায় কিছু আসবাব তৈরি করেছেন। এখন সেই আসবাবের ক্রেতা নেই। তাঁর স্ত্রী বেলী খাতুন বলেন, এখন যে বেচাকেনা হচ্ছে, তাতে সংসারই চলছে না। প্রতি সপ্তাহে ৯০০ টাকার কিস্তি দিতে আবার অন্য জায়গায় ঋণ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আর কিছুদিন এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ঋণ শোধ করার জন্য ভিটা বিক্রি করতে হবে।
বকুল চন্দ্র দাস রাজশাহী নগরের অলকার মোড়ে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরি করে বিক্রি করেন। তাঁর কয়েকজন কর্মচারীও রয়েছেন। বকুল বলেন, সম্প্রতি তিনি ঋণ করে আরও দুই লাখ টাকার মাল তুলেছেন। এরই মধ্যে অবরোধ শুরু হওয়ার কারণে ক্রেতা কমে গেছে। প্রতিদিন যা বিক্রি হচ্ছে, তাতে কর্মচারীদের খরচ দেওয়াই দায় হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ঋণ নিয়ে বড় বিপদে পড়েছেন তিনি।