শুদ্ধতা ও নির্ভুলতার সর্বজনীন পরিবেশ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি

রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, বাংলা ভাষা ব্যবহারের শুদ্ধতা ও নির্ভুলতার সর্বজনীন পরিবেশ এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। সরকারি কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রমিত বানান অনুসরণের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন অপরিহার্য।
জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলা ভাষা ব্যবহারে প্রশাসনের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় গণগ্রন্থাগার।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলী খান। প্রবন্ধে বলা হয়, সরকারি কাজে বা প্রশাসনিক উপস্থাপনায় ভাষার গুণগত পরিবর্তনের জন্য মানসিকতা পরিবর্তনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, নিয়মিত অনুশীলন হচ্ছে কি না, তা পরিবীক্ষণ, অনুবাদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া, এর ব্যবহার প্রসারিত করা এবং ভাষাবিজ্ঞানের প্রতি নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষকে (বাবাকো) শক্তিশালী অনুবিভাগে রূপান্তরের এবং পর্যাপ্ত ডকুমেন্টেশন ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয় প্রবন্ধে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক বলেন, ‘ভাষার প্রয়োগ সম্পর্কে শুধু প্রশাসন নয়, আরও নানা খাত আছে, যেগুলোতে বাংলা ব্যবহারে হীনম্মন্যতা আছে। মেডিকেল, বিজ্ঞান বিষয়ে যাঁরা পরিভাষার অভাবের কথা বলেন, তাঁরা ঠিক বলেন না।’
বিশেষ অতিথি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে প্রবন্ধের বিষয়গুলো দুরূহ হয়ে থাকবে।
সেমিনারের আলোচক সাহিত্য প্রকাশের পরিচালক মফিদুল হক বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে বাংলা ভাষার অনেক কিছু ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রশাসনে পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনকে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
অপর আলোচক বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা এখন গরিব মানুষের ভাষা, স্বল্প আয়ের মানুষের ভাষা। তিনি বলেন, ‘কোনো এক সময় হয়তো শুদ্ধ-সঠিক বানানে বাংলা লিখব না, বাংলা হরফে বাংলা লিখব না—এটি আমার আশঙ্কা।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের পরিচালক কবি অসীম সাহা বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও সরকারি কাজে বাংলার এমন ব্যবহার কীভাবে চলে বুঝে পাই না। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার শুধু সভা-সেমিনার করে হয় না, এর জন্য প্রয়োজন আত্মনিবেদন।’