মানববন্ধনে পুলিশের বাধা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে গতকাল কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে মডেল থানার সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয় l ছবি: প্রথম অালো
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে গতকাল কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে মডেল থানার সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দেয় l ছবি: প্রথম অালো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে গতকাল রোববার সকালে শহরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে তারা শিক্ষার্থীদের ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে মডেল থানার সামনে ১০টা ১০ থেকে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত মানববন্ধনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের চার শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় তাঁদের হাতে ব্যানার ও হাতে লেখা বিভিন্ন পোস্টার ছিল। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ক্লাস-পরীক্ষা দ্রুত চালু চাই’, ‘অচল ইবি সচল চাই’, তিন মাসের স্বপ্ন পোষাবে কি কখনো’, ‘অচলাবস্থার নিরসন চাই’ ‘কথায় কথায় ক্যাম্পাস বন্ধ চলবে না’ ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে দাঁড়ানোর পর কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক ও পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল ইসলামসহ ১৫-২০ জন পুলিশ তাঁদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কর্মসূচিতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন পুলিশের কর্মকর্তারা। ওসি আবদুল খালেক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা তোমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানাও, এখানে দাঁড়াতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে বাধা না দিতে পুলিশকে অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা একটু নমনীয় হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দিতে থাকেন।
মানববন্ধনে দাবি তুলে বক্তব্য দেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারুক ইসলাম। এ ছাড়া ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী চামেলী খাতুনসহ আরও তিনজন বক্তব্য দেন। ফারুক ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হোক। ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা হোক। তিনি বলেন, প্রায় তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।
ইংরেজির স্নাতকোত্তর ছাত্র শামিউল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ, তিন মাস ধরে বসে আছি কুষ্টিয়ায়। বাবা অবসরে চলে গেছেন। নিজের চাকরির বয়সও (এখন ২৮) ফুরিয়ে আসছে। আর কত দিন। আমার চাকরির নিশ্চয়তা কে দেবে। ক্লাস চালুর বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে, সরকারের কাছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই। আপনারা আমাদের জন্য ব্যবস্থা নিন, প্লিজ।’
ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে গত বছরের ২৯ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাড়া করা প্রায় ৩৪টি বাস আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর ১ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা ৩৭ দিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ জানুয়ারি খুললেও এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছেন।