ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা নিতে ইসিকে চিঠি

বিরোধী জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালের মধ্যেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন করতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অনুরোধ জানিয়ে গতকাল সোমবার চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৯ নম্বর সংরক্ষিত আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এ অবস্থায় ওয়ার্ডগুলোর সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত জটিলতা নিষ্পত্তি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি সীমানা নির্ধারণের গেজেট তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর প্রায় ২৫ দিন পর বিষয়টি কমিশনকে জানানো হলো।
গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সীমানা নির্ধারণের বিষয় অবহিত করে বিস্তারিত জানান। এ সময় মন্ত্রিসভাকক্ষেই বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে পুরো বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এ-সংক্রান্ত নথিতে বলা হয়, ২০১০ সালের ১ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯১ ও ৯২ ওয়ার্ড গঠিত হয়েছিল। ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন ২০১১ (২০১১ সালের ২২ নম্বর আইন) অনুযায়ী উল্লিখিত ৯১ ও ৯২ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তা ৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখের স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যথাক্রমে ৫৫ ও ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দক্ষিণ সিটির সীমানা সম্প্রসারণ করা হয় এবং ২০১৩ সালের ৩০ মে ওই সম্প্রসারিত এলাকাকে দক্ষিণ সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে নামকরণ করা হয়। কিন্তু ওই ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠনের পর প্রকৃতপক্ষে ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর তিনটি ওয়ার্ডেরই ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিদ্যমান নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রস্তাবিত এলাকাগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ২৮ অনুযায়ী, ঢাকার জেলা প্রশাসককে সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা এবং অন্য দুই কর্মকর্তাকে সহকারী সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করে। ডিসি কার্যালয় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও ঢাকার ডিসি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে উল্লিখিত ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্বিন্যাস ও পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম এ চিঠি পেয়েছেন। সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধসহ দুটি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সীমানা গেজেট মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। কমিশন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচন কমিশন টাকা চেয়ে চিঠি দেয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ডিসিসি নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে কমিশনের পুরো প্রস্তুত। নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন পরিপত্র বিধি ও আইনের আলোকে সংশোধন করা হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি এলাকার ভোটার তালিকা মুদ্রণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, মার্চের শেষে অথবা এপ্রিলের শুরুতে নির্বাচন করতে চায় সরকার। কারণ, এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা। তা ছাড়া চলমান এসএসসি পরীক্ষাও মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এসএসসি ও এইচএসসির মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন করা যেতে পারে।
তবে অন্য আরেক কর্মকর্তা জানান, রমজানের আগে, বিশেষ করে মধ্য জুন নাগাদ এই নির্বাচন করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এপ্রিলের শুরুতেই তফসিল ঘোষণা করে মে মাসের শেষ ভাগে অথবা জুনের প্রথমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে পারে।
২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ডিসিসি উত্তর ও ডিসিসি দক্ষিণ নামে ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসক অদলবদল করে চলেছে দুই করপোরেশন।
ডিসিসি নির্বাচন বিষয়ে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দিন ধরে ঢাকা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে অনুমতি দিয়ে নির্বাচনের বিষয়টি আরও এগিয়ে আনলেন।
জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অনির্ধারিত আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই সিটির তিনজন প্রার্থীর নাম ঠিক করা হয়েছে।
মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবি: সেনা হস্তক্ষেপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে মন্ত্রিসভায়। এ কথোপকথনকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকেই মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মান্নাকে বিএনপির ‘পেইড এজেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। গণমাধ্যমে মাহমুদুর রহমান মান্নার দুটি অডিও প্রকাশ হয়। বৈঠকে ওই অডিও নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেউ কেউ মান্নার আগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁরা বলেন, মান্না একেক সময় একেক দল করেছেন। কখনো জাসদ, কখনো বাসদ, এরপর আওয়ামী লীগ। নিজের রাজনৈতিক কোনো আদর্শ নেই। এ নিয়ে হাস্যরসও হয় মন্ত্রিসভায়।