'রাকিব এহন একটু ভালো'

‘একটা গাড়ির লাইগা কইতাছে কয়দিন ধইরা, ওই যে আমার ছেলে রাকিব। আপনাদের সবার দোয়ায় রাকিব এহন একটু ভালো’—হাসিমুখে গতকাল বৃহস্পতিবার কথাগুলো বললেন রাশিদা বেগম। ৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় গুরুতর দগ্ধ হয়েছিল শিশু রাকিব (১২)। এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সে।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে রাকিবকে শিশুদের ‘নন অ্যাকিউট’ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে। খুব গভীরভাবে পোড়েনি বা সেরে উঠছে এমন শিশুদের এই ওয়ার্ডে রাখা হয়। আড়তে তরকারি কুড়ানো রোগা ছেলেটি চিকিৎসকদের ভাষায় এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে ওর কানের পাশটায় এখনো দগদগে ক্ষত। হাত-পা বুকও ব্যান্ডেজে মোড়া। ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে ছিল সে। তুলা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মলম লাগিয়ে দিতে দিতে রাকিবের বড় ভাই মো. সবুজ বলেন, ‘আমার ছোট ভাইটা যে আবার কথা কইব, হাত-পা নাড়ব ভাবতেও পারি নাই।’
মাত্র এক বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছে রাকিব। পাঁচ সন্তানের পরিবার টানতে মা রাশিদা বেগম শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলেকে নিয়ে আড়তে তরকারি কুড়াতেন। সেদিন রাকিব একাই বাসে করে আড়তে যাওয়ার সময় পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়। শ্রমজীবী এই শিশু গাড়ির জন্য বায়না ধরেছে।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে ছুটি পেয়েছেন সিলেটের গাড়ি মেরামতকারী তরুণ নিরঞ্জন (১৯)। গত ২২ জানুয়ারি রাতে মেরামতের পর ট্রাক ঠিকমতো চলছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার সময় তিনি পেট্রলবোমা হামলার শিকার হন। শ্বাসতন্ত্রসহ ৩৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। নিরঞ্জনের মা নেই, ঢাকায় সঙ্গে আছে সিরাজ নামের এক বন্ধু। প্রথম আলোকে তিনি জানান, নিরঞ্জন এখন খেতে পারছেন। তাঁর পুরোপুরি সেরে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। ওর বুকটা মারাত্মকভাবে পুড়েছিল। এখনো ক্ষত সারেনি।
বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, কিছুটা সেরে ওঠায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে অটোরিকশাচালক আবদুর রশিদ ও আসবাব ব্যবসায়ী সাজুকেও। তবে চিকিৎসকদের অনেক চেষ্টায়ও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা হামলার শিকার জাহাঙ্গীরের অবস্থার। শরীরের ৪৬ শতাংশ পুড়েছে তাঁর। এখনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন তিনি।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছে সাত বছরের শিশু মরিয়ম, ১৮ বছর বয়সী ফেরিওয়ালা মো. শফিকুল। এখানে আরও আছেন চট্টগ্রামের আড়তদার সুবাস সোম ও ভুলতা গাউছিয়ার শাকিল।
চলমান হরতাল-অবরোধে দগ্ধ হয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৫০ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। তাঁদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯১ জন। মারা গেছেন ১২ জন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৪৬ জন।