ড. কামাল ও মাহ্ফুজ আনামকে গ্রেপ্তার দাবি

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর অফিশিয়াল ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ড. কামাল হোসেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম ও সুশীল সমাজের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে (গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে) গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার জয় তাঁর ফেসবুক পাতায় এই স্ট্যাটাস দেন। জয় বলেন, ‘সুশীল সমাজের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না একটি ফোনালাপে বিরোধীপক্ষকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মানুষ হত্যা করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।’
‘ডেইলি স্টার পত্রিকা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর-এর একটি পোস্টার আধা পৃষ্ঠাজুড়ে ছাপিয়েছে, যেখানে সরকার উৎখাত ও ক্ষমতা দখল করতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এসবই হচ্ছে আমাদের তথাকথিত “সুশীল সমাজ”-এর ক্ষমতা দখলের আরেকটি ষড়যন্ত্র।’
জয়ের বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনবিদ কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভিত্তিহীন, অনভিপ্রেত বক্তব্য তাঁর (জয়ের) মুখে শোভা পায় না।
স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, ‘মান্না তাঁর ফোনালাপে চক্রান্তের অংশ হিসেবে কামাল হোসেনের নামও উল্লেখ করেছেন। মান্না, কামাল হোসেন ও মাহ্ফুজ আনামরা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যাঁরা ১/১১-এর পর সামরিক শক্তিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই লোকগুলো আমাকে বিরক্ত করছে। এরা ক্ষমতা চায়। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়া একটি আসনেও কখনো জয়লাভ করতে পারেনি। দুই মাস ধরে সাধারণ মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ আক্রমণের সুযোগ নিয়ে এই লোকগুলো সম্পূর্ণ অসত্যভাবে দুই দলকেই দায়ী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগ সদস্যদের ভুয়া বোমা হামলাকারী বানিয়ে ডেইলি স্টার একের পর এক গল্প ছাপিয়ে যাচ্ছে, যেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কেউই বিএনপি-জামায়াতের কাছে সহিংসতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন না। এখন আমরা জানি যে তাঁরা চায় এই সহিংসতা চলুক এবং তাঁরা আসলে আরও মানুষ হত্যায় বিএনপি-জামায়াতকে সহযোগিতা করতে চান। ব্যাপার যা-ই হোক তাঁরা আওয়ামী লীগ সরকারকে দোষ দেন, যাতে করে তাঁরা ১/১১-এর মতো আবারও সেনাবাহিনীর পিঠে চড়ে ক্ষমতায় আরোহণ করতে পারেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। সে জন্য আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে তিনি আদৌ ডেইলি স্টার পড়েন কি না।’
এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘জয় প্রকৃতপক্ষে কী বলেছেন, তা তো আমি জানি না। বিষয়টি তাঁর কাছ থেকে জেনে নিয়ে তারপর এ বিষয়ে কথা বলা ভালো হবে।’ তিনি মান্না প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর বিষয়টি এখন বিচারাধীন। এরপর তদন্তে যা কিছু বের হবে, সে অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি তাঁর (জয়) মতামতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মান্নার কথোপকথনে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে। কামাল হোসেন ও মান্নার কর্মসূচির লোকবল ও অর্থ দিয়েছে বিএনপি। সুতরাং কামাল হোসেন দায়ভার এড়াতে পারেন না।’