জরাজীর্ণ ছাউনির নিচে ১৫ বছর

যশোরের কেশবপুর উপজেলার লক্ষ্মীনাথকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাউনি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই সেখানে শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
যশোরের কেশবপুর উপজেলার লক্ষ্মীনাথকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাউনি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই সেখানে শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

ইটের কয়েকটি পিলারের ওপর কোনো রকমে গোলপাতার ছাউনি বিছানো। ক্লাসরুম বলতে একটি চেয়ার, একটি ভাঙা বেঞ্চ, ছেঁড়া চট ও দুটি ভাঙা ব্ল্যাকবোর্ড। আশপাশে কোনো বেড়া নেই। ১৫ বছর ধরে যশোরের কেশবপুরের মজিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এভাবেই চলছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীনাথকাটি গ্রামের দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বিদ্যালয় ছিল না। ফলে গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আবু মুসা জানান, তাঁর দেওয়া ৩৩ শতক জায়গার ওপরে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১১ সালে প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০১২ সালে বিদ্যালয়টি অস্থায়ী অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। এখানে শিক্ষক আছেন চারজন। তাঁরা এখনো গেজেটভুক্ত না হওয়ায় বেতন পান না। ফলে ১৫ বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৪০ জন শিক্ষার্থী আছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি গ্রামের শুরুতেই অবস্থিত। গোলপাতার চালটি অসংখ্য জায়গায় ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। মাটিতে বসেই শিশুরা ক্লাস করছে। আসবাব বলতে একটি চেয়ার ও একটি ভাঙা বেঞ্চ। শিক্ষকেরাও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মাটিতে বসে ক্লাস নিচ্ছেন।
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাহিদ হাসান বলে, স্যাঁতসেতে মেঝেতে বসে ক্লাস করার কারণে প্রায়ই ঠান্ডা লেগে যায়। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুসফিকুর রহমান বলে, ‘পাঁচ বছর ধরে মাটিতে বসেই ক্লাস করছি। অন্য বিদ্যালয়ের ভবন আছে, বেঞ্চ আছে। তারা কীভাবে ক্লাস করে, আমরা কীভাবে ক্লাস করি দেখলে খারাপ লাগে।’
শিক্ষক জাহানার পারভিন বলেন, দুই কিলোমিটার থেকেও অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। কিন্তু সড়কটি পুরোটাই কাঁচা। বৃষ্টি হলেই কাদা হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের অবস্থাও তাই। তখন খোলা মাঠের মধ্যে ক্লাস নিতে হয়। বাড়ি থেকে চট সেলাই করে নিয়ে এসে ছেলেমেয়েদের সেখানে বসতে দেওয়া হয়। একটি কাঁচা শৌচাগার আছে, সেটি খুবই অস্বাস্থ্যকর।
গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ঝড়ে বিদ্যালয়টির তিনবার চাল উড়ে গেছে। গ্রামবাসী ও শিক্ষকেরা টাকা দিয়ে আবার বিদ্যালয়টি দাঁড় করিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক আবু মুসা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাস করে। ছাত্ররা ক্লাসটার (কয়েকটি বিদ্যালয় নিয়ে একটি ক্লাস্টার) পর্যায়ের খেলাধুলায়ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
মজিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সমস্যার বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের সভায় উঠিয়েছি। সামনে গভীর নলকূপের প্রকল্প এলে সেখান থেকে বিদ্যালয়ে একটি নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেশবপুরের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়টির উন্নয়নের জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরে লেখা হয়েছে। শিক্ষকেরা গেজেটভুক্ত হলে তাঁরাও বেতন পাবেন।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন বলেন, এ মাসে মাসিক সমন্বয় সভায় উন্নয়নের জন্য বিদ্যালয়টি রেজ্যুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে ৮৫ জনকে ইউনিফর্ম বানিয়ে দেওয়া হবে। তা ছাড়া কেশবপুরের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ভবনসহ প্রতিষ্ঠানটির সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।