সন্দেহের শীর্ষে আনসারুল্লাহ

অভিজিৎ রায়
অভিজিৎ রায়

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে শাহবাগ থানার কাছ থেকে মামলার নথিপত্র ডিবি গ্রহণ করেছে। 
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার আগেই ঘটনার পর থেকেই ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে তাঁরা মনে করছেন, এ ঘটনায় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সন্দেহের শীর্ষে রাখা হয়েছে। ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলার পলাতক আসামি ও আনসারুল্লাহর সদস্য রেদোয়ানুল আজাদসহ তাঁর তিন সহযোগীকে ধরতে ডিবির কয়েকটি দল মাঠে নেমেছে।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ছাড়াও আরও কয়েকটি সন্দেহকে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। টুইটারে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করার মাধ্যমে কেউ প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফেসবুকে অভিজিৎকে হুমকিদাতা শফিউর রহমান ফারাবীকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এই কর্মকর্তা জানান, ডিবি ইতিমধ্যে অভিজিতের আত্মীয়স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী মিলে অন্তত ৩০ জনের বক্তব্য নিয়েছে। অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় এখনো তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
অভিজিতের ছোট ভাই অরজিৎ রায়ের স্ত্রী কেয়া বর্মণ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার পর ওই রাতেই তাঁর শ্বশুর অজয় রায়কে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁরা এ কথা পুলিশকে জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, অভিজিৎদের বাসার আশপাশে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।
এদিকে এখনো ছেলের হত্যাকারীরা ধরা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক অজয় রায়। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ কী করছে? হত্যাকারী গ্রেপ্তার না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে সাধ্যমতো সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজ শেষ শ্রদ্ধা: পারিবারিক সূত্র জানায়, অভিজিৎ রায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজ রোববার সকাল ১০টায় মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘর থেকে বড় মগবাজারের বাসায় আনা হবে। এরপর বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে রাখা হবে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ গবেষণার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ (৪৩) গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রীকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে আক্রান্ত হন। দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করে। তাঁর স্ত্রীকেও কুপিয়ে আহত করে।
অভিজিতের পরিবারে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা: ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের একদল কর্মকর্তা গতকাল শনিবার অভিজিতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা পরিবারটিকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন। দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা এল শিয়ে ইউএনবিকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘অভিজিৎ রায় যেহেতু একজন মার্কিন নাগরিক, তাই দূতাবাসের কর্মকর্তারা সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বিবৃতি: প্রগতিশীল মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডকে বর্বর ও কাপুরুষোচিত বলে অভিহিত করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১। গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে ফোরাম এই ভয়ংকর ও নৃসংশতায় অংশ নেওয়া ও প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রগতিশীল ও মুক্তমনা মানুষদের বিরুদ্ধে একের পর এক যেভাবে গোপন বর্বরতা চালানো হচ্ছে, তাতে মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে ভিন্নমত পোষণকারী এবং সহনশীল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ভিত্তিমূলেইও আঘাত করা হচ্ছে।
বিচারের দাবি ২০ দলের: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অভিজিৎ রায় হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে। গতকাল ২০ দলের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিকে বলা হয়, বাংলা একাডেমি ও টিএসসির মতো স্থানে নিশ্ছিদ্র পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেও অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে, সরকার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
শুদ্ধস্বরের মালিকের জিডি: প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল গতকাল মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লালমাটিয়ায় তাঁর কার্যালয় বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।