বেশির ভাগ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

ময়মনসিংহের বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। তবে এসব ভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয় জানায়, জেলার ১৩টি উপজেলায় বর্তমানে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ২৫১টি। তবে এসব ভাটায় নিয়ম মেনে কয়লা পোড়ানো হয় কি না, সে তথ্য অধিদপ্তরে নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ইউসুফ আলী বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় ওই সব ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই সব ভাটায় অভিযান চালানো হবে।
কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় কাঠ পোড়ানো হয়?’ পরে এলাকার নাম বললে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি।’
সম্প্রতি বিভিন্ন উপজেলার ইটভাটার মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর দিয়ে এসব ভাটার মালিকেরা ভারতীয় কয়লা এনে ইট পোড়াতেন। কিন্তু এ বছর ওই দুটি বন্দর দিয়ে ভারতীয় কয়লা আমদানি না হওয়ায় কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে তাঁরা কাঠ পোড়াচ্ছেন।
সদর উপজেলার দাপুনিয়া, কাতলাসেন বাজার ও বারেরা এলাকা, ফুলবাড়িয়া উপজেলার দেওখলা ও লক্ষ্মীপুর বাজার এলাকায় কমপক্ষে ১৬টি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, চারটি ভাটা বাদে সবগুলোতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এসব ভাটার সামনে কাঠের স্তূপ দেখা যায়। কোনো কোনো ভাটায় ট্রাকবোঝাই কাঠ নামাতে দেখা যায়। ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে কাঠ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কাঠ বিভিন্ন ভাটার মালিকেরা এনে সড়কের পাশে রাখেন। পরে সুবিধামতো সময়ে ভাটায় নিয়ে সেগুলো পোড়ানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক প্রথম আলোকে জানান, বিপুল পরিমাণ কাঠ ভাটার সামনে স্তূপ করে রাখলে বিষয়টি দৃষ্টিকটু হয়ে যায়। তাই কৌশল হিসেবে মালিকেরা সড়ক ও সড়কের পাশে বিভিন্ন বাড়ির সামনে কাঠ স্তূপ করে রাখেন।
ময়মনসিংহের দাপুনিয়া বাজার থেকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজার পর্যন্ত ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের কমপক্ষে চারটি ইটভাটার শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ ব্যবসায়ীরা এসব জ্বালানি জোগান দেন। ফুলবাড়িয়ার গারো পাহাড়, টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়সহ স্থানীয় বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কাঠ আনেন। জানতে চাইলে ওই চার ভাটার ব্যবস্থাপক বলেন, দু-এক মাস ধরে ওই এলাকার প্রায় ৩০টি ভাটায় কাঠ পোড়ানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। প্রশাসনের কড়াকড়ি না থাকায় তাঁরা নির্বিঘ্নে কাঠ পোড়াচ্ছেন।
একজন ব্যবস্থাপক বলেন, ‘চাকরি করতে এসে আমরা কাঠ পোড়ালেও মনে আশঙ্কা কাজ করে। এভাবে কাঠ পোড়ালে দেশের সব বন উজাড় হতে বেশি সময় লাগবে না।’