অভিজিৎ হত্যার সন্দেহভাজন ফারাবী গ্রেপ্তার: র‍্যাব

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে র‍্যাব।
আজ সোমবার দুপুরে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান প্রথম আলোকে জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে র‍্যাবের সদর দপ্তরে নেওয়া হবে। আজ বেলা দুইটায় প্রেস ব্রিফিং করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিতকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর জখম হন। তিনি এখন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অভিজিতের ঘনিষ্ঠজনদের অভিযোগ, লেখালেখি করার কারণে তাঁকে বিভিন্ন সময় ব্লগ ও ফেসবুকে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শফিউর রহমান ফারাবীও রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ব্লগারদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার জন্য ফারাবীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। ফারাবী অভিজিৎকে হত্যা করতে চান এমন মন্তব্য ফেসবুকেও করেছেন। এতে বলা হয়, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে।’
অভিজিৎ খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে গত শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ব্লগে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত-শিবির।
অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক সূত্র জানায়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে তাঁরা মনে করছেন, এ ঘটনায় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সন্দেহের শীর্ষে রাখা হয়েছে।
ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ছাড়াও আরও কয়েকটি সন্দেহকে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। টুইটারে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করার মাধ্যমে কেউ প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেসবুকে অভিজিৎকে হুমকিদাতা শফিউর রহমান ফারাবীকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
অভিজিৎ রায় ও রাফিদা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। অভিজিৎ ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সম্পাদক ও লেখক। ‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে’ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাহানারা ইমাম পদক পায় মুক্তমনা। রাফিদা আহমেদ লেখালেখি করেন বন্যা আহমেদ নামে।
অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, অবিশ্বাসের ভাইরাস।
অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। আট বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী তিনি। ২০০৮ সালে তিনি রাফিদাকে বিয়ে করেন। এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরেন। চলতি মাসে স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন: