অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন ফারাবী গ্রেপ্তার

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে আটক করেছে র‍্যাব। ছবিটি সোমবার উত্তরায় র‌্যাব কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে আটক করেছে র‍্যাব। ছবিটি সোমবার উত্তরায় র‌্যাব কার্যালয় থেকে তোলা। ছবি: সাজিদ হোসেন

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ সোমবার দুপুরে র‍্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ ব্রিফিং করে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, আজ সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফারাবী তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান জানান, কোনো অপরাধীই প্রথমে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে না। জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে; তবে কৌশলগত কারণেই এখনই সব তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ফারাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন। তবে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারেননি। প্রথমে তিনি বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করতেন, পরে নিজের নামে ‘ফারাবী ব্লগ’ চালু করেন।

র‍্যাবের ভাষ্য, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী দাবি করেছেন, ব্লগে লেখালেখির সূত্রে অভিজিৎ রায়ের লেখার সঙ্গে তিনি পরিচিত হন। একপর্যায়ে লেখালেখি নিয়ে অভিজিতের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়। অভিজিৎ​ দুই বছর আগে ফারাবীকে ‘ব্লক’ করে দেন। কিন্তু ফারাবী থেমে থাকেননি, বিভিন্ন মাধ্যমে অভিজিতের কাছে বার্তা পাঠাতেন ও হুমকি দিতেন।

র‍্যাব জানায়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ফারাবীর সম্পৃক্ততার নানা তথ্য-প্রমাণ তারা পেয়েছে। যেমন অভিজিৎ রায় ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন তথ্য ফারাবী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুসারীদের মাঝে প্রচার করতেন। তাঁকে হত্যার জন্য উসকানি দিতেন। ফারাবী তাঁর ফেসবুকে জানিয়েছেন, অভিজিৎ রায় তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে যু​ক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তাঁর ব্যাপারে যু​ক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তাঁর অনুসারীরা খোঁজখবর রাখছেন। আরেকবার ফারাবী অভিজিতের পরিবারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বলেছেন, ‘অভিজিৎ রায় যু​ক্তরাষ্ট্রে থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে, তখন তাকে হত্যা করা হবে।’

সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় শফিউর রহমান ফারাবীকে র‍্যাবের সদর দপ্তরে হাজির করা হয়।

বিকেলে ফারাবীকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিতকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হামলার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ গুরুতর জখম হন। তিনি এখন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিজিতের ঘনিষ্ঠজনদের অভিযোগ, লেখালেখি করার কারণে তাঁকে বিভিন্ন সময় ব্লগ ও ফেসবুকে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শফিউর রহমান ফারাবীও রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, ব্লগারদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার জন্য ফারাবীকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। র‍্যাবের ব্রিফিংয়েও আজ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

অভিজিৎ খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম বা কোনো কারণ উল্লেখ করেননি। প্রথম আলোকে তিনি জানান, ব্লগে লেখালেখির কারণে উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত-শিবির।

অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দেওয়া হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবির একাধিক সূত্র জানায়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে তাঁরা মনে করছেন, এ ঘটনায় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সন্দেহের শীর্ষে রাখা হয়েছে। ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ছাড়াও আরও কয়েকটি সন্দেহকে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে। টুইটারে ‘আনসার বাংলা-৭’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করার মাধ্যমে কেউ প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেসবুকে অভিজিৎকে হুমকিদাতা শফিউর রহমান ফারাবীকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছে ডিবি।

অভিজিৎ রায় ও রাফিদা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। অভিজিৎ ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সম্পাদক ও লেখক। ‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে’ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাহানারা ইমাম পদক পায় মুক্তমনা। রাফিদা আহমেদ লেখালেখি করেন বন্যা আহমেদ নামে। অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, অবিশ্বাসের ভাইরাস।

অভিজিৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। আট বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী তিনি। এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরেন। চলতি মাসে স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুন: