'ড্যান্ডি'তে আসক্ত হচ্ছে পাটুরিয়ার পথশিশুরা

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া বাস টার্মিনাল। টার্মিনালের উত্তর পাশে একটি বাসের আড়ালে দুই শিশু বসা। খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুজনে পলিথিনের ছোট দুটি ঠোঙা (ব্যাগ) নাক ও মুখে নিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আবার বের করে দিচ্ছে। এ প্রতিনিধির উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পলিথিনগুলো ফেলে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করে।
ওই দুই পথশিশুর একজন বাবু মিয়া (১২) অন্যজন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক। বাবুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার দৌলতদিয়া এলাকায় ওদের বাড়ি। বছর পাঁচেক আগে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এর পর থেকে ভরণপোষণের খরচ না দেওয়ায় বাবুর মা দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় হোটেলে কাজ নেন। দুই বছর আগে দৌলতদিয়া ঘাটে আসক্ত অন্যান্য শিশুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর পর থেকে ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় দাশকান্দি গ্রামের রাসেল হোসেন, পাটুরিয়া ঘাট এলাকার দোকানি মিঠুন হোসেন ও হোটেল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন জানান, আসক্ত এসব পথশিশু দৌলতদিয়া ঘাট এবং এর আশপাশের এলাকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুতা তৈরি ও ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি মেরামতে একধরনের আঠা ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে এটি ড্যান্ডি আঠা নামে পরিচিত। ইলেকট্রনিকস দোকানগুলোতে এসব আঠা বিক্রি করা হয়। এসব শিশু আঠা পলিথিনে ভরে নিঃশ্বাসের সঙ্গে সেই আঠা গ্রহণ করছে।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার নবীন ইলেকট্রনিকস মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, আগে সকলের কাছেই ড্যান্ডি আঠা বিক্রি করা হতো। তবে নেশার কাজেও এই আঠা ব্যবহৃত হয়, তা জানার পর থেকে পরিচিত ব্যক্তিদের ছাড়া আঠা বিক্রি করা হয় না।
পাটুরিয়া নৌ ফাঁড়ি পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবদুল মোকতাদের জানান, ঘাট এলাকায় আড়ালে-আবডালে কোনো শিশু নেশা করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।
মাদকাসক্ত শিশুদের পুনর্বাসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার আপনগাঁওয়ে অবস্থিত আপন মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী কর্মকর্তা নোমান খন্দকার জানান, পরিবারের বাইরে থাকা পথশিশুদের আসক্তি হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি থাকে। আসক্ত এই শিশুদের কোনো মাদকাসক্ত কেন্দ্রে সঠিক উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলে ওরা সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারে।