এক দিনে ৩৫৭ বন্দীর মুক্তি

লালদীঘির মাঠের পূর্ব পাশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক (গেট)। জামিনে ছাড়া পাওয়া বন্দীরা অবশ্য স্টিলের এই বড় গেট দিয়ে বের হন না। এর পাশেই রয়েছে ছোট আরেকটি গেট। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর গেটটি খোলার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়েছে দুজন কারারক্ষীকে।
এই গেট দিয়ে যে-ই বের হয়েছেন, বাইরে অপেক্ষায় থাকা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। নিজের স্বজন নন, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর বেশির ভাগ মানুষই মন খারাপ করে যে যাঁর বসা বা দাঁড়িয়ে থাকার জায়গায় ফিরে গেছেন। আর স্বজন ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কেউ কেঁদেছেন, কেউবা ছিলেন ভাষাহীন। টানা প্রায় দুই মাস পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। সকাল থেকেই কারা ফটেকের বাইরে কয়েক শ মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনের মুক্তির আশায়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারগার থেকে গতকাল জামিনে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫৭ জন বন্দী। একসঙ্গে এত বন্দীর এক দিনে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, প্রায় দুই মাস ধরে জামিনের আবেদন করতে পারছিলেন না আসামিরা। বুধবার থেকে আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেওয়ায় জামিন আবেদনের হিড়িক পড়ে। ৫৪ ধারা, চুরি, মাদক, মারামারি ও যৌতুকের মামলার আসামিরা জামিন পেয়েছেন।
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়, যে দলেরই হরতাল হোক, শুনানিতে আইনজীবীরা অংশ নেবেন না। কিন্তু ২০-দলীয় জোটের অবরোধ শুরু হওয়ার পর গত দুই মাসে (৬ জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ) শুক্র ও শনিবার বাদে জাতীয় ও আঞ্চলিক মিলে চট্টগ্রামে হরতালই হয়েছে ৩১ দিন। এর মধ্যে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসে হরতালে আদালতের কার্যক্রম চলেনি। টানা হরতালে শুনানিতে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, যে দলেরই হরতাল হোক, বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শুনানিতে অংশ নেবেন আইনজীবীরা।
গতকাল বিকেল চারটায় কারা ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশা বেগম। তিনি জানান, বুধবার জামিন পেয়েছেন তাঁর ছেলে শহীদুল ইসলাম। জামিননামাটি রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়। ছেলে কারাগার থেকে বের হয়ে আসবেন, সেই আশায় সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললেও ছেলে বের হয়ে আসেননি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির মিয়া জানান, জামিননামা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে গতকাল ৩৫৭ জন বন্দীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এক দিনে এত বন্দীর মুক্তি চট্টগ্রাম কারা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। তিনি জানান, সাধারণত কারাগার থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন বন্দী জামিনে ছাড়া পান। দুই ঈদের সময় এই সংখ্যা বেড়ে যায়। ঈদের আগের দু-তিন দিন ১৩০ থেকে ১৫০ জন বন্দী ছাড়া পান।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, বুধবার মহানগর আদালতে প্রায় ৫০০ আসামির জামিন মঞ্জুর হয়েছে। গতকাল জামিন পেয়েছেন আরও প্রায় ২০০ জন।
জেলা কোর্ট পরিদর্শক উনু মং জানান, বুধবার জেলা আদালতে প্রায় ২০০ আসামির জামিন মঞ্জুর হয়েছে। গতকালও প্রায় দেড় শ জন জামিন পেয়েছেন।
তবে হরতাল-অবরোধে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার কোনো আসামির জামিন হয়নি বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান।