তিস্তা নিয়ে মোদির সঙ্গে মমতার আলাপ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্বার্থে সব রকমের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা। মোদির সঙ্গে বৈঠকে গতকাল সোমবার এই সহযোগিতার কথা শুনিয়ে মমতা বলেছেন, ঢাকা সফরে যে ভরসা দিয়ে এসেছিলেন, তিনি চান তা বাস্তবায়িত হোক। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মমতা বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাঁর ওপর যেন ভরসা রাখা হয়। চুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার নয় মাস পর মোদির সঙ্গে মমতার এই প্রথম বৈঠক হলো। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা তাঁকে অভিনন্দন জানাননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের কোনো সম্মেলনে মমতা হাজিরও হননি।

গতকাল বৈঠক হয় দুটি। প্রথম বৈঠক শুধু মোদি ও মমতার। প্রায় আধা ঘণ্টার এই বৈঠকে রাজনীতি ছাড়াও উঠে আসে সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তি। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন বিল বাস্তবায়নে তাঁদের দিক থেকে কোনো বাধা যে নেই, সে কথা মমতা বারবার বলে আসছেন। মোদিকেও সে কথাই তিনি বলেন। পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসনের যে দাবি পেশ করা হয়েছে, তা নিয়েও দুজনের কথা হয়। সংসদের বাজেট অধিবেশনেই সেই বিল পাস হওয়ার কথা। ওই বিল পাস হলেই মোদি বাংলাদেশে যাবেন। তিস্তা প্রসঙ্গে মমতার সদর্থক অভিমত জানার পর চার বছর আগের স্থগিত থাকা বিল ফের আলোচনার স্তরে উঠে আসবে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে।

প্রথম বৈঠকের পরেই শুরু হয় দ্বিতীয় বৈঠক। সেই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু মমতার বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা নিয়ে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চাইলে মোদি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মমতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

মোদি প্রসঙ্গটি নিয়ে আর কিছু বলেননি। 

এই বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মমতা। সেখানে তিস্তা প্রসঙ্গে কী কথা হলো—জানতে চাওয়া হলে মমতা বলেন, ‘বাংলাদেশে গিয়ে আমি আমার মনোভাব স্পষ্ট করে এসেছি। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলে এসেছি, আমার দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না। আমি ভরসা রাখার কথা জানিয়ে এসেছি। সেই সফরের কথা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেও জানিয়েছি।’ মমতা বলেন, দুই নেতা-নেত্রীর একান্ত আলোচনায় কী কথা হয়েছে তা জানানো শোভনীয় নয়। তবে সরকারি সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, দেশের স্বার্থকে তিনি সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, তিস্তা নিয়ে মমতা ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছেন। আগের বিরোধিতার রাস্তায় তিনি এখন আর হাঁটছেন না। এবার কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী সেই পুরোনো চুক্তি নতুনভাবে কার্যকরের চেষ্টা হবে। সে জন্য প্রথম মতৈক্যের জায়গায় পৌঁছাতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্যকে। কেন্দ্র-রাজ্য একমত হওয়ার পরেই বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু হবে আলোচনা। কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, মোদি-মমতা পারস্পরিক মতবিনিময় করেছেন, দুই পক্ষই এই বৈঠককে ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ মনে করছে। তিস্তা নিয়ে বন্ধ থাকা আলোচনা
সচল হওয়া এটাই এই মুহূর্তের বড় পাওনা।