যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য দুর্বলতার কারণ জানতে জিন গবেষণা

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের স্বাস্থ্য দুর্বলতার কারণ জানতে জিন গবেষণা শুরু করেছে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন (কিউএমইউএল)। এ গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং পারিপার্শিক বিষয়গুলোর প্রভাব নির্ণয়ের মাধ্যমে কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণ করা।
পূর্ব লন্ডনে কিউএমইউএলের সম্মেলনকক্ষে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওই গবেষণা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। নিজেদের বাংলাদেশি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং পাকিস্তানি বা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পরিচয় দেন—পূর্ব লন্ডনে বসবাসকারী এমন এক লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের লালা বা থুতু থেকে জিনগত নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সেই জিনগত তথ্য হাসপাতালে সংরক্ষিত ওই লোকজনের মেডিকেল রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে গবেষকেরা ক্ষতিকর জিনগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই হার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হৃদ্রোগজনিত অকালমৃত্যুর ঘটনা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ। লন্ডনের বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের লোকজনের ডায়াবেটিসের হার অন্যদের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ এশীয়দের হৃদ্রোগ হওয়ার ঝুঁকিও অন্যদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
নিউহ্যাম, ওয়াল্টহ্যাম ফরেস্ট ও টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার লোকজনকে ওই প্রকল্পে যুক্ত করা হবে। সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার হার লন্ডনের ওই এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কম। জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগের (ওএনএস) হিসাব অনুযায়ী, টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় পুরুষদের গড় সুস্থ আয়ুষ্কাল ৫৫ বছর সাত মাস এবং নারীদের ৫৪ বছর এক মাস। কিন্তু রিচমন্ড এলাকায় পুরুষেরা গড়ে ৭০ এবং নারীরা ৭২ বছর বয়স পর্যন্ত সুস্থ জীবন যাপন করেন।
ওয়াল্টহ্যাম ফরেস্ট ক্লিনিক্যাল কমিশনিং গ্রুপের বিশেষজ্ঞ আনোয়ার খান বলেন, তাঁরা নির্দিষ্ট কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কয়েকটি অসুখ-বিসুখ বেশি হওয়ার কারণ জানতে চান। এতে করে ওই লোকজনের ওপর প্রয়োগ করা বর্তমান চিকিৎসাপদ্ধতি যাচাই করার পাশাপাশি আরও ভালো চিকিৎসা দেওয়া এবং মানুষকে সচেতন করা সহজ হবে। চিকিৎসকেরা সাধারণত বিভিন্ন রোগে শ্বেতাঙ্গদের ঝুঁকির তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণাতথ্য ব্যবহার করে থাকেন। এশীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এ ধরনের গবেষণা খুব কমই হয়েছে।
গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত অধ্যাপক ডেভিড বেন হিল বলেন, দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষেরা চিকিৎসা গবেষণায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবহেলিত। তাই জিনগত জ্ঞান ভবিষ্যৎ চিকিৎসার মূলমন্ত্র হয়ে উঠলেও তা থেকে এসব সম্প্রদায়ের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এমন প্রবণতার পরিবর্তনের জন্য জিন সংগ্রহ ও গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।