যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিসহ অভিবাসী বন্দীদের অনশন

যুক্তরাজ্যে অভিবাসন বিতাড়ন কেন্দ্রগুলোতে (ইমিগ্রেশন রিমোভাল সেন্টার বা আইআরসি) অনশন করেছেন আটক অভিবাসীরা। সেবার নিম্নমান, অমানবিক আচরণ ও অনির্দিষ্টকাল আটক রাখার অভিযোগে গত সোমবার লন্ডনের হার্মন্ডসওয়ার্থ সেন্টারের কয়েক শ বন্দী অনশন শুরু করেন। পরে দেশের অন্য কেন্দ্রগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল শনিবার তাঁরা অনশন ভাঙেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন।

ছয় দিন ধরে চলা এ অনশনে এক পোলিশ নাগরিক মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কজন বন্দী। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যাঁদের অ্যাসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে; তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ রকম প্রায় সাড়ে তিন হাজার অভিবাসী দেশটির ১৪টি আইআরসিতে আটক আছেন।

হার্মন্ডসওয়ার্থ সেন্টারে আটক একাধিক বাংলাদেশি এই প্রতিবেদককে বলেন, যে অবস্থায় তাঁদের রাখা হয়েছে তা কারাগারের চেয়ে খারাপ। সময়মতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। কর্মীদের আচরণে তাঁরা অতিষ্ঠ। নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও কিছু জানেন না তাঁরা।

বাংলাদেশিদের মধ্যে সিলেটের সায়েক আলী, গিয়াস উদ্দিন ও বিয়ানীবাজারের আবদুল মুহিদ আটক আছেন পাঁচ মাস ধরে। সৈয়দ জাকির হোসেন, আলী আহমদ, মাসুম, জিল্লুর রহমান আটক আছেন তিন মাসের বেশি সময় ধরে। আটক ব্যক্তিদের একজন গিয়াস উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে তাঁর মা অসুস্থ। তিনি দ্রুত বাড়িতে ফিরতে চান, কিন্তু তাঁকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না।

আটক ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, তাঁদের ফাঁদে ফেলতে অভিবাসন কর্মকর্তারা অ্যাসাইলাম আবেদনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ওই আবেদনের বিপরীতে যথেষ্ট প্রমাণাদি হাজির করার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। পরে তাঁদের আইআরসিতে আটক করা হয়। তাঁরা প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি সংগ্রহ করার জন্য সময় দেওয়ার দাবি জানান, যাতে তাঁরা আইনি লড়াই চালাতে পারেন। গতকাল শনিবার তাঁরা অনশন ভাঙলেও বন্দীদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ ভাব বিরাজ করছে বলে জানান তাঁরা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর মর্টন হল সেন্টারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রুবেল আহমদের রহস্যজনক মৃত্যুসহ আরও বেশ কিছু ঘটনায় যুক্তরাজ্যে আটক অভিবাসীদের প্রতি আচরণের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এটি ইউরোপের মধ্যে একমাত্র দেশ, যেখানে অভিবাসীদের বন্দী করে রাখার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। বেইল ফর ইমিগ্রেশন ডিটেইনি, দ্য রিফিউজি কাউন্সিলসহ অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো চলমান পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।