ঝিনাইদহে বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড দখলের প্রতিযোগিতা

এবার বিলবোর্ড দখল চলছে ঝিনাইদহে। দখল হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও। গত তিন দিনে শহরের বিভিন্ন মোড়ের বিলবোর্ড ও দোকানের সাইনবোর্ডগুলো আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করে তাঁর ওপর নিজেদের নামে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ছবি দিয়ে ব্যানার-বোর্ড লাগিয়েছেন। গত সোমবার থেকে এই দখল অব্যাহত রয়েছে।
শহরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আগামী ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনাইদহে আসবেন। তাই এখন চলছে বোর্ড দখলের হিড়িক। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক নেতা বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড দখল অব্যাহত রেখেছেন। ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এভাবে তাঁদের ব্যবসার প্রচারণার ক্ষতি হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের পোস্ট অফিস মোড়, পায়রা চত্বর, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ওয়াজির আলী স্কুল এলাকা, হামদহ, আরাবপুর এলাকার বেশির ভাগ দোকানের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড দখল হয়ে গেছে।
শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় দুটি মুঠোফোন কোম্পানি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাইয়ের কয়েকটি বিলবোর্ড দখল করে সেখানে নেতাদের ডিজিটাল ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অন্য প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড ঢেকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, ভাইস চেয়ারম্যান জে কে এম আবদুর রশিদের বিলবোর্ড ও ব্যানার লাগানো হয়েছে। ওয়াজির আলী স্কুলের সামনে আছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের প্রচারণার ব্যানার। এখানে তাঁদের ব্যানারে ঢেকে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দোকানের সাইনবোর্ড।
পোস্ট অফিস মোড়ে বেশি চোখে পড়ছে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জে কে এম আবদুর রশিদের বোর্ড ও ব্যানার। এখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কনক কান্তি দাস, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক হারুন-অর রশিদসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের প্রচারণার বোর্ড ও ব্যানার রয়েছে।
নিজেদের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দখল করে নেতারা ব্যানার সাঁটিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড দিয়ে থাকেন। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময় তাঁদের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডগুলো রাজনৈতিক নেতাদের দখলে থাকে।
শহরের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একবার এগুলো সাঁটানোর পর নেতারা সেগুলো আর খুলতে চান না। ব্যবসায়ীরাও ভয়ে এগুলোতে হাত দেন না।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আক্কাছ আলী জানান, তাঁরা বিলবোর্ডের মালিকের সঙ্গে আলোচনা করেই তাতে বোর্ড বা ব্যানার সাঁটান। তা ছাড়া ক্ষণিকের জন্য এগুলো সাঁটানো হয়, এতে ব্যবসায়ীদের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। তিনি বলেন, তাঁর ছবিসহ পুরোনো কয়েকটি বোর্ড সাঁটানো রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান জানান, দলীয়ভাবে কোনো বোর্ড তাঁরা এখনো সাঁটাননি। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে এগুলো লাগিয়েছেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাইয়ের স্থানীয় প্রদর্শনীকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শাহ আলম জানান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে কেউ তাঁদের বিলবোর্ডের ওপর সাঁটাননি।
ঝিনাইদহ পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, পৌর এলাকার মধ্যে কেউ প্রচারের জন্য বোর্ড লাগালে পৌরসভার অনুমতি নিতে হয়। পৌরসভাকে নির্ধারিত ফি দিতে হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতারা সাধারণত এ নিয়ম মানেন না। গত দুই দিনে শহরে যেসব বোর্ড ও ব্যানার লাগানো হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও পৌরসভার কোনো অনুমোদন নেই।