হেলাল ও আনোয়ারের দেশে ফেরার অপেক্ষায় স্বজনেরা

লিবিয়ায় জঙ্গিদের হাতে অপহৃত দুই বাংলাদেশি হেলালউদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের মুক্তি পাওয়ার খবরে তাঁদের পরিবারে স্বস্তি এসেছে। স্বজনেরা এখন এই দুজনের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
যোগাযোগ করা হলে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানান, হেলালউদ্দিন ও আনোয়ার সুস্থ আছেন।
আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নে। তিনি অপহৃত হওয়ার পর থেকে তাঁর বৃদ্ধ বাবা ইউনুছ মিয়া ও মা আফরোজা বেগম চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন। আর আনোয়ারের স্ত্রী মারুফা খাতুন দুই সন্তান রাহিম (৬) ও রাইমাকে (৪) নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে থাকেন।
মারুফা খাতুন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গিদের কবল থেকে স্বামীর মুক্তি পাওয়ার খবর গত মঙ্গলবার রাতেই পেয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার পর স্বামী একবার ফোনও করেছিলেন। তিনি (আনোয়ার) হাসপাতালে আছেন। স্বামীর কণ্ঠ শুনে বুকের ওপর থেকে যেন একটা পাথর নামল। এখন তিনি তাঁর দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের শেষে তাঁর স্বামী সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন। মাস দুয়েক থেকে আবার চলে যান। এরপর দুই বছর ধরে দেখা নেই। এখন তাঁকে দেখার প্রতীক্ষায় আছেন।
আনোয়ারের ভাই আমজাদ হোসেনও গতকাল ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ভাই দেশে ফিরলেই তিনি শান্তি পাবেন।
৬ মার্চ লিবিয়ার সিরতে শহরের আল ঘানি তেলখনিতে বন্দুকধারী জঙ্গিরা হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই জঙ্গিরা ১১ জন নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে। পরে সেখান থেকে দুই বাংলাদেশিসহ নয়জন বিদেশিকে জিম্মি করা হয়। তাঁরা সবাই ভ্যালু অ্যাডেড ওয়েলফিল্ড সার্ভিসেস (ভিওএএস) নামের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। মঙ্গলবার জঙ্গিরা দুই বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয়।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, হেলালউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরাও এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তাঁর বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে হেলেনা আক্তার বলেন, ‘আব্বা মুক্তি পাওয়ার পর এখনো একবারও ফোন করেননি। আমরা কথা বলার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আব্বা সর্বশেষ এক বছর আগে লিবিয়া গেছেন। আমরা সবাই তাঁকে দেখার অপেক্ষায় আছি। আব্বা দেশে ফিরলেই আমাদের ঈদের আনন্দ হবে।’
হেলালউদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম স্বামীকে লিবিয়া থেকে দ্রুত দেশে ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে স্বামী জঙ্গিদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু কবে তাঁকে বাড়িতে ফেরত আনা হবে—এ নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েই গেছে।’