আসল রূপে রাজধানী

হরতাল ছিল না গতকাল। রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দিনভর। ছবিটি সন্ধ্যার দিকে কাকলী মোড় থেকে তোলা l প্রথম আলো
হরতাল ছিল না গতকাল। রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দিনভর। ছবিটি সন্ধ্যার দিকে কাকলী মোড় থেকে তোলা l প্রথম আলো

সামনে টানা তিন দিনের ছুটি। পেছনে টানা হরতাল। এর মাঝখানে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার মানুষ দেখেছে অধিক ব্যস্ত ও কর্মমুখর একটা দিন। ঢাকা ফিরে পায় তার আসল রূপ। আর ঢাকার আসল রূপ মানেই তো তীব্র যানজট। এর সঙ্গে চৈত্রের তাপ।
গতকাল দিনভর মূল সড়কগুলোতে যানবাহন ঠাসা থাকায় পথচলতি মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। এর রেশ চলে অনেক রাত পর্যন্ত।
আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরোধের খপ্পরে সারা দেশ। আর ১০ মার্চ বাদ দিলে গত ১৫ জানুয়ারির পর থেকে পুরো দেশের মানুষের সব কার্যদিবসই পড়েছে হরতালের কবলে। একটা সময় ঢাকায় হরতাল-অবরোধ অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। যানজটও শুরু হয়। তবে গতকালের মতো তা এতটা তীব্র ও অস্বস্তিকর ছিল না।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেলে ১০ মার্চ হরতাল তুলে নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি বিজয় মিছিলের কর্মসূচির কারণে সেদিনও ঢাকায় তীব্র যানজট হয়েছিল।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটের যানবাহনের সারি পশ্চিমে সংসদ ভবন এলাকার খেজুরবাগান পর্যন্ত পৌঁছায়। খামারবাড়ির মুখে যানজটে আটকে থাকা বাসের যাত্রী মাহিনুর ইসলাম বলেন, একই যানজট পার করে এসেছেন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়াতে। তাঁর ভাষায়, ‘এত দিন ছিল অকার্যকর হরতালের ঢাকা। এবার আসল ঢাকার দেখা পাইছি।’
বেলা দেড়টার দিকে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোরায়ার চারদিকেই দীর্ঘ গাড়ির সারি দেখা গেছে। বসুন্ধরা সিটির সামনের সড়কের একটা সিগন্যাল পার হতে সময় লেগেছে প্রায় ১৬ মিনিট। কাছাকাছি সময়ে কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও শাহবাগেও তীব্র যানজট ছিল। মতিঝিলের অফিসপাড়াতেও ছিল মানুষের প্রচণ্ড ভিড়।
সকাল সাতটার দিকে ধানমন্ডি, লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খোলা। স্কুলগুলোর সামনে ছিল শিক্ষার্থী-অভিভাবকের ভিড়। যানজট, গরম আর মানুষের ভিড়—সব মিলিয়েই কচিমুখগুলোকে বেশ হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ২৬ মার্চ বন্ধ থাকবে। তবে বেশির ভাগ খোলা থাকলেও তা দুপুরের পর। অনেকের ছুটির দিনের নানা ব্যস্ততা। তাই গতকাল নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটিসহ বড় বিপণিবিতান ও মার্কেটে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
যানজট আর মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ার কারণে রিকশা ও সিএনজিচালকেরাও কাল বেশি ভাড়া হেঁকে বসেন। চলতি হরতালে কিংবা স্বাভাবিক সময়েও পান্থপথ থেকে মহাখালী পর্যন্ত দেড় শ টাকায় যাওয়া যেত। গতকাল বেশির ভাগ চালকই ভাড়া হাঁকেন ১৭০-১৮০ টাকা। সিএনজিচালকদের দাবি, হরতালে দ্রুত যাত্রী পরিবহন করতে পেরেছেন। যানজটের কারণে এক ট্রিপের সময়ে হরতালে দুই ট্রিপ দেওয়া যায়। বাড়তি সময়ের আয় পুষিয়ে নিতেই এই ব্যবস্থা।
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও নগরের আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশেও তীব্র যানজট হয়। বিশেষ করে বিকেলের দিকে মানুষের ঢল নামে এসব স্থানে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের সব ট্রেনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। ট্রেনগুলো ছেড়েছে আসনের তুলনায় বাড়তি যাত্রী নিয়ে। বিকেলে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়েও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।