মায়ের সবটুকু আলো নিয়ে গেল চন্দ্রমুখী

চন্দ্রমুখী। ছবি: সংগৃহীত
চন্দ্রমুখী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে যে নাজনীন আখতার শুয়ে আছেন, তিনি নিরন্তর ছুটে চলা কোনো সাংবাদিক নন। তিনি একজন সন্তানহারা মা। এই মা আজ বৃহস্পতিবার সকালেও সন্তানের কাছে চলে যাবেন বলে চিকিৎসা নিতে চাননি।
১৬ সেপ্টেম্বর ছয় বছর বয়সী চন্দ্রমুখী মারা যাওয়ার পর পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়েছিলেন মা নাজনীন। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। চন্দ্রমুখী বেশ কিছুদিন ধরে যকৃতের রোগে ভুগছিল। মারা যাওয়ার আগে অচেতন অবস্থায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে ছিল সে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, নাজনীন এখনো বিপদমুক্ত নন। তাঁর সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত। মেরুদণ্ডের চার জায়গায়, পায়ের ওপরের দিকে, হাতের কবজিতে ফাটল।  পাঁচতলা থেকে লাফ দেওয়ায় বাঁদিকের ফুসফুসে আঘাত লেগেছে নাজনীনের। ফুসফুসে একটা টিউব লাগানো হয়েছে। ফুসফুস অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা আছে এখনো।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের ৬ নম্বর শয্যায় শুয়েছিলেন নাজনীন। ভেঙে যাওয়া হাতটা ওপরের দিকে তোলা। সেবিকারা তাঁর পায়ে ক্যানোলা লাগাচ্ছিলেন। আজ কাছে যেতেই শোনা গেল গোঙানির শব্দ। নাজনীনের চোখের কোলটা আজও ভেজা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, নাজনীন তাঁদের জানিয়েছেন সারা শরীরে তাঁর অসহ্য ব্যথা, রাতভর চোখে ঘুম আসে না।
চিকিৎসকেরা বলছেন, নাজনীনের মনের ক্ষত পৃথিবীর কোনো চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা যাবে না। সে ক্ষত বড় গভীর। আজ সকালেও তিনি চিকিৎসকদের বলেছেন, ‘আমি তো চন্দ্রকে বলেছি, আমি ওর কাছে চলে যাব। আপনারা কেন আমার চিকিৎসা করছেন?’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা উন্নতির দিকে গেলে নাজনীনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে। তবে তিনি আবার কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।

নাজনীন যখন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন, বাইরে তখন অপেক্ষায় স্বামী রকিবুল ইসলাম ও সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ীরা।

সংবাদকর্মীদের বাইরে যাঁরা নাজনীনকে চিনতেন না, চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর পর তাঁরাও জেনেছেন মা নাজনীনকে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নাজনীনের কোলে চন্দ্রমুখীর ছবি দেখে কেঁদেছেন অনেকেই। তাঁরা সমব্যথী হয়েছেন সন্তানহারা মায়ের।

চন্দ্রমুখীর জন্মদিনে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন নাজনীন। লিখেছিলেন, ‘শুভ জন্মদিন মা। তোমার কারণেই আমার ভুবন এত আলোয় ভরা...আমার প্রাণ।...সবার দোয়া নিয়ে তুমি ভালো থাকো মা...শতায়ু হও।’

চন্দ্রমুখী চলে গেছে। মা নাজনীনের জীবনের সব আলোটুকুও যেন সে নিয়ে গেছে। দিশেহারা মায়ের চোখ কেবলই খুঁজে ফেরে চন্দ্রমুখীকে।