দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও নেই

ময়মনসিংহ পৌরসভার মর্যাদা পায় ১৮৬৯ সালের ৯ এপ্রিল। বাজিতপুরবাসী পৌর নাগরিক হন এরও এক দিন আগে। ময়মনসিংহ এখন বিভাগে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন। বাজিতপুর আছে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে।
শুধু তা-ই নয়, প্রায় ১৪৬ বছর আগের এই পৌরসভাটির নাগরিক সুবিধা এখন দ্বিতীয় শ্রেণির পর্যায়েও নেই। সড়কগুলোর বেহাল দশা হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
বাজিতপুর বৃহত্তম ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলা। ৪ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার সীমানা নিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মধ্যে সবার আগে এটি পৌরসভায় উন্নীত হয়। কিন্তু উন্নয়ন ও অর্থনীতির দিক দিয়ে বাজিতপুর দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে।
বিপর্যস্ত যোগাযোগব্যবস্থার কথা স্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাচীন শহরের বাসিন্দা হলে কী হবে, সুবিধায় তো এগোতে পারিনি। এত দিনেও সড়কগুলো মানুষের চলাচলের উপযোগী করা যায়নি।’ তবে তিনি জানান, এই বিষয়ে পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের সড়কগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। এর মধ্যে বাজিতপুর-কুলিয়ারচর সড়কের মিরারবন এলাকার এক কিলোমিটার পথের অবস্থা খুবই নাজুক। মাটি সরে গিয়ে পায়ে হাঁটার সরু পথে পরিণত হয়েছে সড়কটি। যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
মিরারবন গ্রামের মাহমুদুল হাসান নামের এক কলেজছাত্র জানান, সড়কটি ব্যবহার করেই তাঁদের বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজে যেতে হয়। চোখের সামনে সড়কটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। শত শত মানুষ কষ্ট করছে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া নেই। একই মন্তব্য করেন একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন।
খারাপ অবস্থা বঙ্গবন্ধু স্কুল থেকে থানা সড়কটিরও। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির স্থানে স্থানে এখন খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। কাদা হয়ে যায়।
সিনেমা হল থেকে কবি নজরুল সড়কটির এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পথের অবস্থাও এখন যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। স্থানীয় লোকজন জানান, খানাখন্দের কারণে প্রায়ই রিকশা ও অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাজার এলাকার ভুক্তভোগী রিকশাচালক কাসেম মিয়া (৪৫) বলেন, ‘পেট আছে, এই কারণে আমাদের কাজে যাইতে হয়। তবে এই রাস্তা দিয়া এক দিন রিকশা চালাইলে দুই দিন বিছানা থাইক্কা উঠা যায় না।’
চন্দ্রগ্রাম-জিম্মাপুর সড়কেরও বেহাল দশা। এর বেশির ভাগ অংশ থেকে মাটি সরে গেছে। এই কারণে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার।
বাসস্ট্যান্ড থেকে দোয়ানী মসজিদ সড়কটির বেশির ভাগ স্থান থেকে ইট-সুরকি উঠে গেছে। পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ছোট হয়ে গেছে সড়কের আকারও। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। থানা থেকে বাজারের সেতু পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা আরও নাজুক। এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির বেশির ভাগ অংশ ভাঙাচোরা।
পৌর মেয়র এহসান কুফিয়া জানান, বাজিতপুর শুধু নামেই আদি পৌরসভা। অর্থসংকট কাটছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন জোগাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কিছু সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজেট পেলে পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো সংস্কার করা হবে।