মোল্লাহাট গুদামের পৌনে তিন কোটি টাকার খাদ্যশস্য লোপাট

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৬৮৮ মেট্রিক টন (প্রায় সাত হাজার বস্তা) খাদ্যশস্য লোপাট হয়েছে। এসব খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা।
ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এই হিসাব দিয়েছে।
এ ঘটনায় মোল্লাহাট উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক লায়লা আফরোজা বৃহস্পতিবার রাতে ওই গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিলন কুমার মণ্ডলকে একমাত্র আসামি করে মোল্লাহাট থানায় একটি মামলা করেছেন। মিলন গোপালগঞ্জ জেলার সাতপার গ্রামের শম্ভুনাথ মণ্ডলের ছেলে।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তদন্তে দেখা গেছে, তিনটি গুদামের ১৫টি খামালে খালি বস্তা রেখে এবং জায়গা ফাঁকা রেখে কারসাজি করা হয়েছে। বাইরে থেকে খামাল ঠিক দেখা গেলেও বস্তা গণনা করার সময় কারসাজি ধরা পড়ে। হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪১৯ মেট্রিক টন চাল, ১৩২ মেট্রিক টন গম ও ১৩৭ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যায়নি।’
জেলা প্রশাসক শুকুর আলী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এ ছাড়া উদ্ধার করা মালামাল এ গুদামের কি না, তা তদন্ত করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ইমদাদুর রহমান বলেন, মিলন প্রায় চার বছর মোল্লাহাটে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁকে বাগেরহাট কার্যালয়ে বদলি করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর এম এ জলিল নামের এক কর্মকর্তা সেখানে গেলে মিলন তাঁকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় গুদামের মজুত মেলানোর সময় মিলন কৌশলে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান এবং আত্মগোপন করেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মোল্লাহাট বাজারে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছয়জন ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ১৫০ বস্তা গম ও ৫০৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে। এসব খাদ্যশস্য মোল্লাহাট থানায় রাখা হয়েছে। ওই দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি আট দিন তদন্ত শেষে প্রায় দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা মূল্যের ৬৮৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
ইমদাদুর রহমান জানান, ওই গুদামে এক হাজার ৮০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত থাকার কথা ছিল। ৯ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় খাদ্যনিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ ইকরামুল কবির গুদাম পরিদর্শন করলেও কোনো গরমিল পাওয়ার কথা বলেননি।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তদন্ত কমিটির সদস্য আ ন ম খায়রুল আনাম জানান, নিখোঁজ মিলন কুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।