পাঠদান চলে মন্দিরে

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মধ্য চাঁদশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে পাশের মন্দিরে। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মধ্য চাঁদশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত। শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে পাশের মন্দিরে। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মধ্য চাঁদশী গৌরীচাঁদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি ১০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় পরবর্তী পাঁচ বছর পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদান (ক্লাস) করা হয়। পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় সর্বজনীন মন্দিরে পাঠদান করা হচ্ছে। নতুন ভবন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার ধরনা দিয়েও কোনো ফল মেলেনি।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মধ্য চাঁদশী সর্বজনীন মন্দিরে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে। পাশেই বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন। ভবনটির ভেতরে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিমের রড বের হয়ে গেছে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিকাশ গোস্বামী জানান, বিদ্যালয়ের ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০০৫ সালে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভবনেই পরবর্তী পাঁচ বছর পাঠদান করা হয়। কিন্তু ধসে পড়ার আশঙ্কায় ২০১০ সাল থেকে ভবনটি পরিত্যাগ করে মধ্য চাঁদশী সর্বজনীন মন্দিরের বারান্দায় পাঠদান শুরু করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৭২ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর কুমার দত্ত জানান, মধ্য চাঁদশী গ্রামটি পশ্চাৎপদ ও হতদরিদ্র সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত। ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩-৯৪ সালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। অথচ এক যুগের মাথায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা হওয়ার পরও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতেন। তিনি আরও বলেন, ‘অজপাড়া গাঁয়ের হতদরিদ্র এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় বিদ্যালয়টি অবহেলিত এবং কেউই এটির খোঁজ রাখে না। আমাদের সমস্যার কথা বারবার জানানো হলেও কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কান্ত দে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও ডোবা ভরাট করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমি বহুবার মৌখিকভাবে বলেছি। লিখিত দিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।’ জরুরি ভিত্তিতে ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। উপজেলা শিক্ষা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।