সম্মেলন হলেও বিরোধ মেটেনি

কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে গত বছরের ২৫ নভেম্বর। দীর্ঘ ১০ বছর পর ওই সম্মেলন হয়। এর পরও পেরিয়ে গেছে চার মাস। কিন্তু আজও কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়নি। পাল্টাপাল্টি কমিটি জমা পড়ায় তা ঝুলে গেছে।
পাল্টাপাল্টি কমিটির নেতারা কেন্দ্রঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখছেন।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতারা খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানকে সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করেন। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয় রবিউল ইসলামকে।
একই দিন শহরের আড়ুয়াপাড়ায় দলের কার্যালয়ে জড়ো হন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পৌরসভা মেয়র আনোয়ার আলীর অনুসারীরা। তাঁদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলার অন্য নেতারাও যোগ দেন। সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে আনোয়ার আলীকে সভাপতি ও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাংসদ আবদুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই পক্ষই কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠায়।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সালের সম্মেলনের পর কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করত। ২০১৪ সালের সম্মেলনের পরও নিজেদের বিরোধ মেটেনি। গত ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রঘোষিত কমিটির নেতা সদর উদ্দিন ও আজগর আলীর নেতৃত্বে শহরে মহড়া দেন নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমাবেশ করেন। একই দিন বিকেলে আনোয়ার আলী ও আবদুর রউফের নেতৃত্বে একটি সমাবেশ হয় পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে। দুই পক্ষই জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে।
৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতালের প্রতিবাদে ১৪ দলের ব্যানারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি দেওয়া হয়। ওই দিন শহরের মজমপুর গেট থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত শহরে বিশাল মানববন্ধন করেন সদর উদ্দিনের অনুসারীরা। একই দিন সাংসদ আবদুর রউফ নিজ নির্বাচনী এলাকা কুমারখালীতে একটি বিশাল সমাবেশ করেন। ওই দিন বিকেলে শহরের বড় বাজারেও মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তিনি। এ ছাড়া দলীয় ও জাতীয় দিবসগুলোও দুটি পক্ষকে আলাদাভাবে পালন করতে দেখা যায়। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সাধারণ কর্মীরা কোন পক্ষে কাজ করবেন, তা নিয়ে পড়েন বিভ্রান্তিতে।
এক পক্ষের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আবদুর রউফ বলেন, ‘নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি (সদর উদ্দিন খান) দল থেকে অটো বহিষ্কার হয়েছেন, তিনি সভাপতি হন কীভাবে? তাঁকে তো সভাপতি করার প্রশ্নই আসে না।’ সাংসদ আরও বলেন, নেত্রী যে কমিটিকে অনুমোদন দেবেন, সেই কমিটির হয়েই দলকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন তিনি। তবে এ সিদ্ধান্তটা যত দ্রুত নেওয়া হবে, তত দলের জন্য মঙ্গল।
সম্মেলনে ঘোষিত জেলা কমিটির সভাপতি সদর উদ্দিন বলেন, সম্মেলনের দিন প্রথম অধিবেশনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ চার পদের নাম ঘোষণার পর থেকেই সেগুলো কার্যকর হয়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে তাঁদের নামেই সব আন্দোলন ও দলীয় অনুষ্ঠানের চিঠি আসছে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। তিনি আরও বলেন, কিছু প্রেতাত্মা দলে ঢুকে দলকে বিভক্ত করছে। এরা আসলে বিএনপি-জামায়াতের হয়ে কাজ করছে।