সেবায় সব থেকে পিছিয়ে

নামে ১ নম্বর ওয়ার্ড হলেও সেবায় সবার থেকে পিছিয়ে। ওয়াসার লাইন নেই। ডাস্টবিন নেই। গ্যাস-সংযোগ নেই বেশির ভাগ এলাকায়। বিদ্যুতেরও একই অবস্থা। সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলেও কিছু রাস্তাঘাট নির্মাণ ছাড়া অন্য সব নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ পাহাড়তলীর বাসিন্দারা।
স্থানীয় ব্যক্তিদের ক্ষোভ, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলে প্রার্থীরা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটে না।
২৪ বর্গমাইল আয়তনের এ ওয়ার্ডের দক্ষিণে চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও উত্তরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্বে অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়ক। আর পশ্চিমটা পাহাড়বেষ্টিত। ওয়ার্ডের মোট ভোটার ২৯ হাজার ২৪১ জন।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো ওয়ার্ডে একটিও ডাস্টবিন নেই। ওয়াসার লাইন নেই, তাই পানিও নেই। বাসিন্দাদের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি কম উঠছে। ফলে অনেককে দূরে গিয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়।
ওয়ার্ডের বড়দিঘীরপাড়, চৌধুরীহাট, সন্দ্বীপ কলোনি, নন্দীরহাট ও ছড়ারকুল এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে আছে প্রায় ১০টি কলোনি। এসব কলোনির বাসিন্দারা নদীভাঙনের শিকার। তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে বসতি গেড়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ কলোনিতে বিদ্যুৎ, পানি বা স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই।
এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, রাস্তায় বাতি থাকলেও অধিকাংশ মিটিমিটি জ্বলে। সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয় সেসব এলাকায়। এখানে কোনো মাতৃসদন হাসপাতাল নেই। প্রসূতিদের ২০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ছড়ারকুল এলাকার মো. বেলাল জানালেন, তাঁর এলাকায় এখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পার হতে হয়।
তবে কাউন্সিলর মো. শাহজাহানের দাবি, জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কলোনির বাসিন্দাদের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা ও নলকূপ স্থাপনে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নকাজ হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচ বছরে তিনি ২০ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নকাজ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌধুরীহাটের পশ্চিমে ঠান্ডাছড়ি এলাকায় সিটি করপোরেশন ২০১০ সালে একটি পর্যটন স্পট উদ্বোধন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। দুই দশক আগে সিটি করপোরেশন পাশের ৫০০ একর জায়গায় একটি গার্মেন্টস পল্লি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, তাও এখন ফাইলবন্দী।
চার বছর ধরে এখানকার বাসিন্দারা ভবন নির্মাণ করতে গেলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নকশা অনুমোদন করছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয় ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটির’ আহ্বায়ক দুর্গাপদ নাথ বলেন, সিডিএ ‘ফতেয়াবাদ মডেল টাউন’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলে নকশা অনুমোদন করছে না। তাঁর প্রশ্ন, লোকজন বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে?
এ বিষয়ে সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীন উল ইসলাম খান বলেন, পাহাড়ে পাদদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লোকজনকে উচ্ছেদ না করে পাহাড়ের পাদদেশে খালি জায়গায় প্রকল্পটি করা হতে পারে।’